সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানে বিমান হামলা চালাতে গিয়ে যে ভারতীয় পাইলট আটক হয়েছেন, তাকে ‘শান্তির স্বার্থে’ আগামীকালই (শুক্রবার, ১ মার্চ) মুক্তি দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বক্তৃতাকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ কথা জানিয়েছেন।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ডাকা এ অধিবেশনে বক্তৃতার শুরুতেই ইমরান খান বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আক্ষেপ প্রকাশ করেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে ভারতের তথ্য-প্রমাণ সম্বলিত ডসিয়ার দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ইমরান বলেন, ‘আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের (বালাকোটে বিমান হামলা) দু’দিন পর কেন তারা আজ এই ডসিয়ার দিলো? এটা কি আরও আগে করা যেতো না? যা হোক, আমরা এরই মধ্যে ঘটনা তদন্ত ও এক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছি।’
১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় ভারতের বিশেষায়িত নিরাপত্তা বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ৪৪ জওয়ান নিহত হন।
জঙ্গিদের মদত দেওয়ার জন্য ইসলামাবাদকে অভিযুক্ত করে এর মোক্ষম জবাব দিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরের দিকে পাকিস্তানের বালাকোট শহরে জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদের আস্তানায় হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী। হামলায় প্রায় ৩০০ জঙ্গি নিহত হয় বলে দাবি করে ভারত। এর একদিন পরই (বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতের দু’টি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত ও পাইলট উইং কমান্ডার অভি নন্দনকে আটক করার দাবি করে পাকিস্তান।
অবশ্য বুধবার বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতকে সতর্ক করে বলেন, ‘যে অস্ত্র আপনাদের আছে, সে অস্ত্র আমাদেরও আছে। যুদ্ধ বেঁধে গেলে কিন্তু পরিস্থিতি কারোরই নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।’ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভারতকে শান্তির স্বার্থে সংলাপে বসার আহ্বানও জানান তিনি।
অভি নন্দন আটক হওয়ার পর প্রথমে ভারত বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরে তা স্বীকার করে এবং তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তন দাবি করে। এ নিয়ে কূটনৈতিক দৌড়ঝাপও শুরু করে তারা।
বৃহস্পতিবার অধিবেশনে ইমরান খান সংসদের বলেন, ‘আমি ভারতকে সংলাপের প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু তাদের ভালো সাড়া ছিল না।’
ভারতের জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ঘটনাটি নিয়ে সেখানকার ক্ষমতাসীন শক্তি (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি) রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে ইঙ্গিত করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি কেন ভালো সাড়া আসছে না, কারণ সামনে যে নির্বাচন।’
সীমান্তে উত্তেজনা ঘিরে পাকিস্তানের গণমাধ্যম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, ‘তারা যুদ্ধবাজ প্রচারণা চালায়নি। কিন্তু হতাশার সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ভারতীয় মিডিয়া যেন যুদ্ধ-হিস্টরিয়ায় ভুগছিল।’
বালাকোটে ভারতের বিমান বাহিনীর হামলার পরও পাকিস্তান সংযত আচরণ করেছে উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, ‘আমরা সংযত থেকেছি এ কারণে যে আমরা চেয়েছি নিশ্চিত হতে, সেখানে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরপর আমরা যে পাল্টা হামলা চালিয়েছি, তার উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করা। ক্ষয়ক্ষতি হয় এমনভাবেও আমরা হামলা চালাইনি।’
ভারতে আত্মঘাতী হামলা কেন বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখতে দেশটির নেতৃত্বকে আহ্বান জানিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘যদিও আত্মঘাতী হামলার জন্য ভারত সবসময় ইসলামী মৌলবাদকে দায়ী করে আসছে, কিন্তু ৯/১১ এর আগে তামিল টাইগারদের সংশ্লিষ্ট হিন্দু যোদ্ধারাও এই কৌশল অবলম্বন করতো। এটা আসলে ধর্মের জন্য নয়, এ ধরনের আত্মঘাতী হামলা হচ্ছে দুর্বলদের অস্ত্র। তারা হতাশা থেকেই এসব করছে।’
এজন্য কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন ইমরান খান।
ভুলভাল কোনো সিদ্ধান্তের কারণে পরিণতি ভুগতে হতে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে ইমরান খান বলেন, ‘ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অনেক দেশ শেষ হয়ে গেছে। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। ভারত যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়, আমাদেরও পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সমাধানের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয় মন্তব্য করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তির স্বার্থে ভারতের পাইলটকে আগামীকালই মুক্তি দেওয়া হবে।’