সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ অপরাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) থেকে : জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে শিক্ষার সর্বাধিক ভূমিকার কথা আমরা সবাই জানি। সুশিক্ষিত,সভ্য এবং সৃষ্টিশীল মানুষ তৈরীর কারখানা প্রাথমিকের পর হলো এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখন সেই মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমুহে যদি শিক্ষক সংকট দিনের পর দিন চলতে থাকে তবে তার প্রভাব সামগ্রিকভাবে প্রকৃত মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রেও পড়তে বাধ্য। তারই ধারবাহিকতায় বানিয়াচংয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কারণে একমাত্র শতবর্ষী এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম। বিদ্যালয়টি ১৮৯৬ সালে লোকনাথ রমনবিহারী নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত। বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়,বর্তমানের এই বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র সংখ্যা ৫৫০জন। অন্যদিকে ৫৫০জন শিক্ষার্থীদের পাঠদানে প্রধান শিক্ষক নিয়ে মাত্র ৭জন শিক্ষক রয়েছেন। সহকারি শিক্ষক নিয়ে ২৫ জনের পদে রয়েছেন মাত্র ছয়জন। তাঁরাই চালাচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। এমএলএসএস পদে ৬ জনের মধ্যে আছে মাত্র একজন। পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ে শুণ্য রয়েছে অফিস সহকারি,নাইটগার্ডের পদও। বিদ্যালয়ে দেয়া তথ্য মতে গণিত,রসায়ন,ক্যামিস্ট্রি,ভূগোল,ইংরেজি,বাংলাদেশের বিশ্বপরিচয়,কম্পিউটার,চারুও কারুকলা বিষয়ে শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে। ইংরেজিতে চার শিক্ষক থাকার কথা। সেখানে এই বিষয়ে একজন শিক্ষকও নাই। বাংলা বিষয়ে চারজনের মধ্যে আছে মাত্র একজন। গণিতে তিনজনের মধ্যে সেখানে আছেন মাত্র একজন শিক্ষক। গুরুত্বপুর্ণ বিষয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাওছার শোকরানা জানান,এই বিদ্যালয়সহ অন্য আরেকটি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে,শিক্ষক সংকট থাকার পরও অনেক শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রেখাছ বলেন,বিদ্যালয়টিতে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় কাঙ্খিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাই দ্রæত সম্ভব এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দুরকরণে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জাকির হোসেইন শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে জানান,একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী প্যাটার্ন অনুযায়ী এই বিদ্যালয়ে ২৫জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে ৬জন শিক্ষক দিয়ে ৫৫০জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। এই বিদ্যালয়ে দুরের কোন শিক্ষক বদলী হয়ে আসতে চান না। আবার কেউ আসলেও কয়েক মাস থেকে অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যান। অনেক সময় শিক্ষকদেরই দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরো জানান,প্রতি মাসেই শিক্ষকদের শূণ্য পদের তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। কেন শূণ্য পদগুলোতে সময়মতো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছেনা তা আমার বোধগম্য নয়। সুতরাং শিক্ষক সংকট নিরসনে কোনো প্রকার অবহেলা বা কালপেক্ষণ মোটেই কাম্য নয়।