বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সারাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর গণভবনের মাছ-হাঁসও নিয়ে গেল জনতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন, ছাড়লেন দেশ

বানিয়াচংয়ে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য পলো বাওয়া। কালের পরিক্রমায় শুকিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল-বিল আর নালা। আগের মতো আষাঢ়-শ্রাবণ এলেও নৌকায় পাল তুলে মাঝিদের গান ধরতে দেখা যায় না। শত প্রতিকূলতার মাঝেও কেউ কেউ বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে সোমবার (২৭জানুয়ারি) বেলা সাড়ে এগারটায় বানিয়াচং উপজেলার ১০নং সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া বড়আন বিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব।

এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নানা বয়সের কয়েক’শ মানুষ পলো নিয়ে এই উৎসবে অংশ নেন। এদের প্রায় সব বয়সের মানুষ বিভিন্ন মাছ ধরে সীমাহীন আনন্দে ভেসেছে। দিনভর বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ছেলেবুড়ো সকলেই মেতেছিল পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে। শত বছররে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার এই উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে নদী রক্ষার দাবী মাছ শিকারীদের।

বানিয়াচং উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী-নালা খাল-বিলের পানি এরই মধ্যে শুকিয়ে এসেছে। আর এসব শুকনো জলাশয়ে প্রতি বছরের পৌষ মাস থেকে ফালগুন মাস পর্যন্ত চলে বিভিন্ন এলাকায় সৌখিন মৎস্য শিকারীদের পলো বাওয়া উৎসব। সময়টা এলেই মাছ শিকারীরা ঐক্যবদ্ধভাবে দল বেঁধে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন। পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্ট্যই হলো দল বেঁধে পলো নিয়ে (বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরী ঝাঁপি) মাছ ধরা।

উৎসবের দিন নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়ালজালসহ নানা ধরণের মাছ ধরার জিনিসপত্র নিয়ে মাছ শিকরীরা মিলিত হন এই বড়আন বিলে। অন্যদিকে এই উৎসবকে ঘিরে সৌখিন মাছ শিকারীরা গড়ে তুলেন বিভিন্ন সমিতির। এসব সমিতির সৌখিন মাছ শিকারীরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে পলো বাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে পরে সবাইকে জানিয়ে দেন।

এ ঘোষণার পর আগ্রহী শৌখিন মাছ শিকারীরা বাঁশের তৈরী পলো নিয়ে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন। পর্যায়ক্রমে একেক নদীতে বা জলাশয়ে এমনকি বিলে একেক দিন এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পলো বাওয়া উৎসবে একজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও আনন্দে মেতে ওঠে।

উৎসবে শৈল, গজার, বোয়াল,মাগুর মাছসহ নানা প্রজাতরি মাছ ধরা পড়ে। পলো বাওয়া দেখতে আশেপাশের গ্রামের শতশত লোকজন ভীড় জমায় বড়আন বিলে। মাছ শিকরী আব্দুল রহমান বলনে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী-নালা ও খাল-বিলের তলদশে ভরাট হয়ে প্রতিনিয়িত পানি হ্রাস পাচ্ছে। এবং নদী দূষণসহ নানামুখী তৎপরতার কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর বেশির ভাগই বিনষ্ট হয়ে গেছে। নদী-খাল-বিল বেঁচে থাকলে বেঁবে থাকবে ঐতিহ্যবাহী এই পলো উৎসব। সৌখিন মাছ শিকারী ইকবাল হোসেন বলেন- দীর্ঘকাল ধরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আমরা গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে ওই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকি। দিনে দিনে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নদীমাতৃক প্রতিটি এলাকাতে ই যেন এই ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা হয় সেই দাবিটুকু ই জানান তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com