বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সারাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর গণভবনের মাছ-হাঁসও নিয়ে গেল জনতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন, ছাড়লেন দেশ

৩২ বছর ধরে বন্ধ হবিগঞ্জ-বাল্লা ট্রেন, হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট

মোঃ জামাল হোসেন লিটন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ): দীর্ঘদিন চলে গেলেও পুনরায় চালু করা যায়নি হবিগঞ্জ-বাল্লা ট্রেন। পরিত্যক্ত থাকার কারণে লুট হয়ে গেছে রেলের শত শত কোটি টাকার সম্পদ। রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে দখল করে নেয়া হয়েছে রেলের কোটি কোটি টাকার ভূমি। রেলের কর্মচারীরা যারা বিভিন্ন স্টেশনে অবস্থান করতেন তারাও রেলের জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছেন। কোনো কোনো কর্মচারী রেলের ভূমিতে ভবন নির্মাণ করে ভাড়াটিয়া বসিয়ে টাকাকড়ি পকেটস্থ করছেন।

হবিগঞ্জ-বাল্লা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয় বৃটিশ আমলে। বৃটিশ সরকার ১৯২৮ সালে বাল্লা রেলপথ নির্মাণ করে গড়ে তুলে অবকাঠামো। ৩৬ কিলোমিটারের মধ্যে হবিগঞ্জ বাজার, হবিগঞ্জ কোর্ট, শায়েস্তাগঞ্জ জংশন, শাকির মোহাম্মদ, চুনারুঘাট, আমুরোড, আসামপাড়া এবং ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেঁষা বাল্লা-এ ৮টি স্টেশনের মধ্যে চলাচল করতো কয়লার ইঞ্জিনচালিত ট্রেন। এর মধ্যে চুনারুঘাট, আমুরোড এবং আসামপাড়া স্টেশনগুলোর গুরুত্ব ছিল বেশি। ওই ৩টি স্টেশন থেকে ২২টি চা বাগানে উৎপাদিত চা রেলপথেই চালান দেয়া হতো। কম খরচে চা বাগানের শ্রমিক রসদ, চা বাগানে ব্যবহৃত নানান সরঞ্জামাদি, সার-কীটনাশকসহ নানান পণ্যও আসতো বাল্লার ট্রেন দিয়েই।

স্বাধীনতার যুদ্ধের পর বাল্লা ট্রেনের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। এ কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চল বলে খ্যাত সুতাং ও বড়কুটা নামে আরো দুটি স্টেশন গড়ে তুলে রেল কর্তৃপক্ষ। সে সময় ভারত থেকে শরণার্থী ফিরিয়ে আনার কাজে ট্রেনটির ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। এ সময় বাল্লার ট্রেনে যুক্ত হয় ডিজেল ইঞ্জিন। ট্রেনটি দিনে দু’বার করে যাতায়াত করতো হবিগঞ্জ থেকে সীমান্ত স্টেশন বাল্লার মধ্যে।

শরণার্থী পরিবহন পর্ব শেষ হওয়ার পর বাল্লার ট্রেনটি দখলে নেয় চোরাকারবারিরা। পরবর্তীতে বাল্লার ট্রেনটি চোরাকারবারিদের ট্রেনে পরিণত হয়। প্রথম প্রথম এ নিয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও পরবর্তীতে বিনা টিকিটে ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে চুপসে যান যাত্রীরা। এ অবস্থায় চলতে থাকা ট্রেনটি লোকসানের মুখে পড়ে। রেল কর্তৃপক্ষ রেল লাইনের সংস্কার কাজ স্থগিত করে দেয়। ট্রেনটি চলতে থাকে চরম ঝুঁকি নিয়ে। গতিবেগ নেমে আসে ১৫ কিলোমিটারে। এ অজুহাতে এরশাদ সরকারের আমলে প্রথম এ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। যাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ১ সপ্তাহের মধ্যেই পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয় এ পথে।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর বাল্লার ট্রেনের চলাচল আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ট্রেন চলাচলের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। সেই কারণে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রেনটি চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিছুদিন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলার পর আবার বন্ধ করে দেয়া হয় ট্রেনটি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলমন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শায়েস্তাগঞ্জবাসী সংবর্ধনা প্রদান করে। এ সময় তিনি বাল্লা ট্রেনটি কিছুদিনের মধ্যে চালু করবেন বলে আশ্বাস দেন। এখনো বাল্লার ট্রেন বন্ধই রয়ে গেছে।

চুনারুঘাট-মাধবপুর উপজেলার (হবিগঞ্জ-৪) সংসদ সদস্য মাহবুব আলী বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার পর এলাকার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষ মনে করে, মন্ত্রী মাহবুব আলীই পারেন এলাকার ঐতিহ্য বাল্লা ট্রেনকে পুনরায় চালু করতে। আর সে আশায় পথপ্রাণে চেয়ে আছেন সাধারণ মানুষ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com