রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন
নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি সড়ক পাকা করার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। সড়ক খোঁড়ার পর মাটি, ইটের খোয়া ও বালু দেওয়ার কারণে বৃষ্টিতে পলিমাটির মতোই কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কার্যস্থলে নির্মাণকাজের বিবরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড দৃশ্যমান থাকার কথা থাকলেও তা টানানো হয়নি। ফলে এ কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
জানা গেছে, মহাদেবপুর সদর ইউনিয়নের চকগোবিন্দ মাঠ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পাকা করার কাজ হচ্ছে। কাজটি করছে এলজিইডি’র তালিকাভুক্ত নওগাঁর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, সড়কের কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। কয়েকবার ঠিকাদারের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। দরপত্রের নিয়ম না মেনে কাজ হচ্ছে ঠিকাদারের ইচ্ছামতো। এলাকাবাসীর অভিযোগ তারা (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) আমলে নিচ্ছে না। উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদের নাকের ডগায় রাস্তার নির্মাণকাজে অনিয়ম হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি নীরব। সংশ্লিষ্টরা দর্শকের ভূমিকায় চুপচাপ থাকায় সরকারি নিয়ম নীতি কাগুজি আদেশে পরিনত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সঠিক তদারকি না থাকায় বৃষ্টির পানির মধ্যে দায়সারাভাবে বালির পরিবর্তে মাটি দিয়ে দ্রুত গতিতে কাজ করার চেষ্টা করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকৌশলীদের যোগসাজসে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো কাজ করলেও দেখার কেউ নেই। নির্মাণকাজ তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন কর্মকর্তা-প্রকৌশলীকেও সেখানে দেখা যায় না। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী- দ্রুত তদন্ত করে শিডিউল অনুসারে উপকরণ দিয়ে যেন রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এ বিষয়ে তাঁরা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চকগোবিন্দ গ্রামের ব্যবসায়ী আশরাফুল বলেন, ‘ঠিকাদারি কাজ যে কত নিম্নমানের তা আমরা দেখতে পেয়েছি। সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও যাদের কারণে রাস্তা মেয়াদোত্তীর্ণের আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘বালির পরিবর্তে মাটি দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করার প্রতিবাদ করেছি- কিন্তু কে শোনে কার কথা?’
একই গ্রামের হাসান বলেন, ‘এলাকায় ভাল বালু থাকার পরও কেন মাটি ব্যবহার করছে, তা আমরা জানি না। খোয়ার ওপর মাটি ঢালার পর যখন পানি দেওয়া হয় তখন পুরো রাস্তায় কাদা হয়ে যায়। তাই এভাবে নির্মাণ করা রাস্তাটি টেকসই হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। কাজ চলমান অবস্থায় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের একজন কার্যসহকারী নিয়মিত দেখা শোনার দায়িত্বে থাকার কথা থাকলেও অভিযোগ দেওয়ার মত কাউকে পাওয়া যায় না।’
বালুর পরিবর্তে মাটি দিয়ে কাজ করার বিষয়ে ঠিকাদার ছোবহান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
সড়কটির কাজ দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকা উপ সহকারী প্রকৌশলী ওমর বক্স বলেন, ‘বালুর বদলে মাটি দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ সত্য নয়। সড়ক নির্মাণে কোন অনিয়ম হচ্ছে না।’ কার্যস্থলে নির্মাণকাজের বিবরন সম্বলিত সাইনবোর্ড না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি প্রকল্প এলাকায় নির্মাণকাজের বিবরন সম্বলিত সাইনবোর্ড দৃশ্যমান থাকার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু মহাদেবপুরে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যস্থলেই সাইনবোর্ড থাকে না।’
মহাদেবপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদের কাছে মুঠোফোনে প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমানসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারনে বর্তমান সাধারণ ছুটি চলছে। ছুটি শেষ হলে অফিসে আসেন।’