মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা রপ্তানিতে ‘কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই’ বলে সেরাম ইন্সটিটিউট অব ইনডিয়ার (এসআইই) এক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে বিবিসি।
সোমবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার যে খবর একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা ‘পুরোপুরি সঠিক নয়’ বলে সেরাম ইন্সটিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন দিল্লিতে বিবিসির সাংবাদিক ইয়োগিতা লিমায়িকে জানিয়েছেন।
বিবিসি বাংলা লিখেছে, “তাদের টিকা রপ্তানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে কোম্পানিটি (সেরাম ইন্সটিটিউট) এখন অন্য দেশে টিকা রপ্তানির অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যা পেতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
“তবে রপ্তানি শুরুর আগেই ভারত সরকারকে ১০ কোটি টিকা দেওয়ার বিষয়ে (সেরাম ইন্সটিটিউট) সম্মত হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা রপ্তানি করতে পারবে না, যেহেতু তাদের রপ্তানির অনুমতি নেই।”
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করেছে, তার উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গ যুক্ত রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া।
কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাঠানোর কথা সেরাম ইনস্টিটিউট।
ওই তিন কোটি ডোজ টিকার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
ভারত থেকে টিকা এনে বাংলাদেশে সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ তারা।
ভারতের ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা রোববার কোভিশিল্ডের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিলে বাংলাদেশেও দ্রুত টিকা পাওয়ার আশা জোরালো হয়ে ওঠে, কারণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলে আসছিলেন, ভারত অনুমোদন দিলে জানুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম চালান পেয়ে যাবে।
কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পূনাওয়ালার বরাত দিয়ে রোববার রাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রপ্তানি শুরুর আগে আগামী দুই মাস তারা ভারতের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতেই জোর দেবে।
তার ওই বক্তব্যের ভিত্তিতে একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, টিকা রপ্তানিতে ‘নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে’ ভারত। ওই খবরে বাংলাদেশের টিকা পাওয়া বিলম্বিত হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়।
তবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টিকা পাওয়া নিয়ে কোনো ‘সংশয়’ তাদের নেই।
“সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী, টিকা বাংলাদেশে অনুমোদন পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে আমরা প্রথম লটের টিকা পাব।”
তিনি জানান, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের অনুমোদনের জন্য গত বৃহস্পতিবারই তারা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। সোমবার তারা টিকার অনুমোদনের জন্য আবেদন করবেন।
এদিকে দুপুরে সচিবালয়ে করোনাভাইরাস টিকা সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য সেবা সচিব মো. আবদুল মান্নানও সাংবাদিকদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয় নিয়ে সকাল থেকে কাজ করছি। বেক্সিমকো, ফরেন মিনিস্ট্রি ও ভারতের মিশনের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের সাথে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি ব্যাহত হবে না। কোনো সমস্যা হবে না, আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।”
চুক্তি অনুযায়ী, ‘ডব্লিউএইচও অনুমতি দিলেই’ সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে টিকা দেবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আলোচনা অনুযায়ী আমরা ভ্যাকসিন পাব। এ চুক্তিটি আন্তর্জাতিক তাই, এর উপর আমরা আস্থা রাখি। সব বিষয়ে আমরা আশাবাদী।”