বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : এই আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। বিভিন্ন সময়ে মারা যাওয়া ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা কবর থেকেই যেনো জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন! সেই অভিযোগে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে! আরও তাজ্জব হওয়ার মতো ঘটনা হলো, ৪৫ বছর আগে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরও রয়েছে সেই অভিযোগপত্রে! কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো এই প্রতিবেদন থেকেই জানা যাবে বিস্তারিত। এ সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র রয়েছে গণমাধ্যমের।
এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের রয়েছে পাল্টাপাল্টি অবস্থান। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে ৪ সদস্যবিশিষ্ট বেসামরিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে মৃত মুক্তিযোদ্ধারা লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভারতীয় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নম্বর ও স্বাক্ষর জাল করে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ জনই মৃত!
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এ ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা।
সূত্র জানায়, ৪৫ বছর আগে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মীরের গেজেট নম্বর-৭২৯। আবুল কাসেম নামে স্বাক্ষর করা এক জনের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে মৃত মোস্তফা মীরের গেজেট নম্বরটি। এদিকে ওই অভিযোগপত্রের সূত্র ধরে সেই আবুল কাসেমের নম্বরে ফোন কল দেওয়া হলে তিনি অসংলগ্ন তথ্য দেন। তার গেজেট নম্বর জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জানান তার গেজেট নম্বর ৯২৯। অথচ ডিসি কার্যালয় বরাবর দেওয়া অভিযোগ উল্লেখ রয়েছে আবুল কাসেমের গেজেট নম্বর-৭২৯। ২০ বছর আগে মারা গিয়েছেন আবদুল লতিফ। তার গেজেট নম্বর ৭২৩।
আবদুল লতিফের গেজেট নম্বরটি ব্যবহার করে স্বাক্ষর করেছেন গোলাম মোস্তফা। যে স্বাক্ষর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ৭ বছর আগে মারা যান মো. সামসুল হক। তার বাড়ি সাদীপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও কাজীপাড়া গ্রামে। তার গেজেট নম্বর ৫৬২। মৃত সামসুল হকের গেজেট নম্বরটি মো. সৈয়দ হোসেনের স্বাক্ষর করা নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে।
৫ বছর আগে মারা গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান ভূইয়া। তার গেজেট নম্বর-৬৭১। তার বাড়ি জামপুর ইউনিয়নের মিরেরবাগ গ্রামে। মৃত সোলায়মান ভূইয়ার ৬৭১ নম্বর গেজেটের নম্বরটি সোলায়মান মুন্সি নামের একজনের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে।
১ মাস আগে মারা গেছেন মতিউর রহমান। তার গেজেট নম্বর-৭২৫। তিনি মারা যাওয়ার পরও অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ১ মাস আগে মারা যান আছাদুজ্জামান। তার গেজেট নম্বর-৫৮৬। তিনি মারা যাওয়ার পরও অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের একটি সূত্র জানায়, বেসামরিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে মৃত মুক্তিযোদ্ধারা যাচাই-বাছাই কমিটিতে আলতাফ হোসেন ও অ্যাডভোকেট সফিউদ্দিন ভুঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, ৪৫ বছর, ২০ বছর কিংবা ৭ বছর আগে মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে এই লিখিত অভিযোগ করতে পারেন, তা আমার বুঝে আসছে না। মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম, গেজেট নম্বর ও স্বাক্ষর জাল করে জেলা প্রশাসনে আবেদন করার ঘটনাটি সত্যি। কারণ, নারায়ণগঞ্জের মারা যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আমার মুখস্থ। সম্প্রতি ডিসি অফিসে জমা হওয়া অভিযোগপত্রে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম দেখে বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসকের নজরে আনি। তখনই জেলা প্রশাসক বিষয়টি আমলে নেন। ডিসি সাহেব এবং আমি অবাক হয়েছি- কীভাবে মৃত মুক্তিযোদ্ধারা দস্তখত দিলো! এটা নিশ্চই জালিয়াতি করে করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি গণমাধ্যমকে বলেন, চিহ্নিত চক্রটি বারবার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করার জন্য এই ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে যাচ্ছে। মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম, গেজেট নম্বর ও স্বাক্ষর জাল করে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে একটি চক্র। তদন্ত কমিটি গঠন করে এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এখনও তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি। ইউএনও তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিলেই আমরা বলতে পারবো- ‘কারা মারা গেছেন। আবেদনটি বৈধ নাকি অবৈধ। কেউ শত্রুতা করে জমা দিয়েছে নাকি ঠিক আছে।’