শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

সব চোখ এখন মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের দিকে

তরফ নিউজ ডেস্ক : সব চোখ এখন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের ওপর। দেশটিতে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ পর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। এর ফলে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের সূর্য্য উঁকি দিতে না দিতেই আবার কালো মেঘের আড়ালে হারিয়ে গেছে। অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে দিয়ে ক্ষমতার মসনদে এখন মিন অং হ্লাইং। ফলে তিনি কিভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নেন, বিশ্ববাসী তার বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়- তা এখন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রায় ৫০ বছর মিয়ানমার ছিল সরাসরি সামরিক শাসনের অধীনে। কিন্তু তারা সবেমাত্র জাতীয় ঐক্যের দিকে আস্তে আস্তে অগ্রসর হচ্ছিল বলেই মনে হয়। কিন্তু সেনাদের মনে কি ছিল তা হয়তো বুঝে উঠতে পারেননি সুচি।

২০০৮ সালে দেশটিতে যে সংবিধান রচিত হয়, তাতে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্থায়ীভাবে বড় অবস্থান পাকাপোক্ত করে নেয় সেনাবাহিনী। পার্লামেন্টের মোট আসনের শতকরা ২৫ ভাগ আসন সেনাবাহিনীকে ছেড়ে দিতে হয়। এসব আসনে সেনাবাহিনী যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দিতে পারে। এখানেই শেষ নয়, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে পারেন সেনাপ্রধান। এনএলডির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে এমনই চুক্তি করেছিল তারা। অং সান সুচিসহ দলীয় অনেক সদস্য এর আগে সাবেক সামরিক জান্তার বিরোধিতা করার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বয়স এখন ৬৪ বছর। তিনি ১৯৭২-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ইয়াঙ্গুন ইউনিভার্সিটিতে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। তখনও তার মধ্যে রাজনৈতিক সক্রিয়তা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। তার একজন সহপাঠী ২০১৬ সালে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, মিন অং হ্লাইং খুব কম কথার মানুষ। সাধারণত তিনি লো-প্রোফাইল রক্ষা করে চলেন। যখন সহপাঠীরা বিক্ষোভে যোগ দিলেন তখন মিন অং হ্লাইং প্রধান সামরিক বিশ্ববিদ্যালয় ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমিতে (ডিএসএ) আবেদন করেন। ১৯৭৪ সালে তৃতীয় দফায় তিনি সফল হন। ডিএসএতে তার এক সহপাঠীর মতে, তিনি ছিলেন একজন গড়পরতার ক্যাডেট।

সেনা থেকে রাজনীতিক
গণতান্ত্রিক পালাবদল যখন শুরু হয় ২০১১ সালে তখন সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেন মিন অং হ্লাইং। ইয়াঙ্গুনের কূটনীতিকরা বলেন, সুচির প্রথম দফার মেয়াদে মিন অং হ্লাইং নিজেকে একজন স্পষ্টভাষী সেনা থেকে একজন রাজনীতিক হিসেবে পাল্টে ফেলেন। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত, সরকারি কর্মকান্ড এবং মঠে সফরের কর্মকা-গুলো তিনি ফেসবুকে প্রচার করতে থাকেন। এসবই নজরে পড়েছে তাদের। ২০১৭ সালে তার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস নারকীয়তা সংঘটিত করে। এর আগে পর্যন্ত তার সরকারি প্রোফাইলে হাজার হাজার মানুষ ছিলেন ফলোয়ার। কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, অন্য দেশগুলোতে যেসব রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে তা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন মিন অং হ্লাইং। তিনি দেখেছেন ২০১১ সালে ক্ষমতার পালাবদলের ফলে লিবিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা এড়ানোর প্রয়োজন। এর পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রধান কখনোই ক্ষমতা ছাড়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই তিনি পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর জন্য শতকরা ২৫ ভাগ আসন সংরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়েছেন, যা সুচি সরকারকে অনেকটা বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে দেয়। তাদের মতে, গত ৮ই নভেম্বর মিয়ানমারে যে ভোট হয়েছে, তাতে ভোটার তালিকায় ছিল ব্যাপক অনিয়ম। এ করণে সুচির দল বিজয় পয়। ২০১৬ সালে আরো ৫ বছরের জন্য নিজের ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধি করিয়ে নেন সেনাপ্রধান।

অবরোধ
২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ, নজিরবিহীন নৃশংসতা চালায় সেনাবাহিনী। এর ফলে কমপক্ষে ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সেনাবাহিনী গণহত্যা, গণধর্ষণ, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয় এবং সেনাবাহিনীর আরো তিনজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে অবরোধ দেয়। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসসহ বিভিন্ন আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানায় মিয়ানমারের এসব শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধ আরোপ করতে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com