শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : এবার নয়তো কবে— এমন একটা কথা কিছুদিন ধরে অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে। ইতিহাসের সেরা দল নিয়েই যে বিশ্বকাপ মিশনে বাংলাদেশ। এমন প্রশ্ন তাই একেবারেই অমূলক নয়। বাংলাদেশের এই দলে তারকা খেলোয়াড়ের অভাব নেই। অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মিশেলটাও চমত্কার। অনেকদিন ধরে পঞ্চপাণ্ডবনির্ভর হয়ে পড়া দলটির হয়ে এখন তরুণরাও পারফর্ম করতে শুরু করেছেন। সর্বশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজে নতুন-পুরনোর কম্বিনেশনে দারুণ ফল পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতেছে টাইগাররা। এর আগে কখনো ‘মিনোজ’, আবার কখনো ‘আন্ডারডগ’ হয়ে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার আন্ডারডগের চেয়েও বেশি কিছু ভাবা হচ্ছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলকে। সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সও ইঙ্গিত দিচ্ছে তেমন কিছুর। সব মিলিয়ে এই দল নিয়ে প্রত্যাশার পারদ তাই এখন বেশ ঊর্ধ্বমুখী। তবে এ সবকিছুই লড়াইয়ের পূর্বাবস্থা। মূলমঞ্চে পারফরম্যান্স দিয়েই সব অনুমান ও সম্ভাবনাকে সত্য প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ এখন বাংলাদেশের সামনে। সেই লক্ষ্যে প্রথম পরীক্ষায় আজ বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
ইংলিশ লায়নদের আঘাতে আহত প্রোটিয়াদের চ্যালেঞ্জটা যদি বাংলাদেশ জিতে নিতে পারে, তবে সামনের পথটা আরো মসৃণ হয়ে যাবে। তবে কাজটা সহজ হবে না, হারের বৃত্ত ভাঙতে মরিয়া প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের সামর্থ্যের সেরাটা দিয়েই খেলতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের জন্য প্রথম ম্যাচের আগে আশার কথা হচ্ছে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নিশ্চিতভাবেই ভঙ্গুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ মিশন শুরু করবে তারা। তবে এটিই আবার বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারে। কারণ, হারের যন্ত্রণা ভুলে দক্ষিণ আফ্রিকাও চাইবে দ্রুত জয়ে ফিরতে। আর সেখানেই বাংলাদেশ ম্যাচকে পাখির চোখ করেছে তারা। এ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বিশ্বকাপের পথটা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা করবে তারাও। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি চান শুরুটা ভালো করতে। তিনি বলেন, ‘শুরুটা ভালো হলে সেটা দলের জন্য ভালো হয়। তাতে আত্মবিশ্বাসটা বাড়বে।’
বিশ্বকাপ মিশনে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণাও কম নয়। ইংল্যান্ডে আয়োজিত সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপটি বাংলাদেশের জন্য বেশ স্মরণীয়। স্কটল্যান্ডকে হারানোর পাশাপাশি গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে হারিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই ম্যাচটিই ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রার সূচনাবিন্দু। ২০ বছর পর বিশ্বকাপও আবার ফিরেছে আঁতুড়ঘরে। আর বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যটা এখন পুরনো সাফল্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। দলের মান ও ফর্ম বিবেচনায় এই বাংলাদেশের সেই সামর্থ্য পুরোপুরিই আছে। অপেক্ষা কেবল নিজেদের সেরাটা নিয়ে জ্বলে ওঠার। সে লক্ষ্যে নিজেদের আত্মবিশ্বাসী থাকার কথা বারবার বলে আসছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। এখন সেই আত্মবিশ্বাসী রূপটাকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার অপেক্ষা।
এই ম্যাচের আগে অবশ্য বাংলাদেশ দলকে চিন্তায় রাখবে দলের চোট আশঙ্কা। তামিম ইকবাল ম্যাচের একদিন আগে কবজিতে চোট পেয়েছেন। যদিও আশঙ্কা কাটিয়ে তামিম মাঠে নামবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সবার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চোটের অস্তিত্ব। যা প্রথম ম্যাচে ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে। তবে অধিনায়ক মাশরাফির আশা গোটা টুর্নামেন্টে দলের সবাই সুস্থ থাকবে, ‘সর্বোচ্চ যে প্রস্তুতিটা নেয়ার দরকার ছিল, এখন পর্যন্ত আমরা সেটা নেয়ার চেষ্টা করেছি। কিছু চোট শঙ্কা হয়তো আছে, কিন্তু আশা করি তারা সুস্থ হয়ে যাবে। আমি আশা করছি, পুরো টুর্নামেন্টটা যেন তারা সুস্থ থাকে।’
অবশ্য কেবল বাংলাদেশ দলেই নয়, চোট নিয়ে ভুগতে হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও। চোটের কারণে তারা হয়তো এ ম্যাচেও পাচ্ছে না দলের অন্যতম সেরা পেসার ডেল স্টেইনকে। যার অভাব প্রথম ম্যাচে ভালোই টের পেয়েছে প্রোটিয়ারা। তাই স্টেইন না থাকাটা এ ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ হতে পারে। তবে স্টেইন না থাকলেও আছেন কাগিসো রাবাদা, ইমরান তাহির ও লুঙ্গি এনগিডির মতো পরীক্ষিত বোলাররা। তাদের তামিম-সৌম্য-মুশফিকরা কীভাবে সামলান তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
এদিকে উইকেটে রান দেখার কথা বললেন মাশরাফি। তবে যেমন উইকেটই হোক মানিয়ে নিতে চান তিনি, ‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড যে উইকেটে খেলেছে, সেখানে খেলছি। ওভালের উইকেটে ইংল্যান্ড তিনশর উপরে রান করেছে। এটা ব্যাটিং উইকেটই হবে। এই উইকেটে স্পিনাররা কেমন করে, সেটা একটা ব্যাপার। তবে উইকেটের আচরণের ওপর সব নির্ভর করছে। আমরা আশা করছি ফ্ল্যাট উইকেট হবে। উইকেট যেমনই হোক, আমাদের মানিয়ে নিতে হবে এবং সেরাটা দিতে হবে।’
এর আগে দুই দল সব মিলিয়ে ২০টি ম্যাচে একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের ৩ জয়ের বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১৭টি।
শেষ মুহূর্তে ভাবনায় বদল না এলে ম্যাচের আগের দিন এই সিদ্ধান্ত মোটামুটি চুড়ান্ত করে ফেলেছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে চোট পাওয়া মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে পাওয়া নিশ্চিত নয় এখনও। ম্যাচের দিন সকালে তার অবস্থা বুঝে নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত।
মোসাদ্দেককে জায়গা দিতে একাদশের বাইরে থাকতে হচ্ছে সাব্বির রহমানকে। সাইফ না খেললে একাদশে ঢুকেবেন রুবেল হোসেন।
মোসাদ্দেককে একাদশে রাখার পেছনে কাজ করেছে অনেকগুলো ব্যাপার। একই উইকেটে চারদিনের মধ্যে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা অন্যতম বড় কারণ। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে স্পিনে আরেকটি বিকল্প চায় দল।
মাহমুদউল্লাহ বোলিং করতে পারলে হয়তো সাব্বিরই থাকতেন একাদশে। তবে কাঁধের চোটের কারণে বোলিং করতে পারছেন না মাহমুদউল্লাহ। গত ২৪ মে কার্ডিফে অনুশীলনে বোলিং করার পর ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় অনুশীলনেও আর বল হাতে নেননি তিনি। তাই খুঁজতে হয়েছে স্পিনে বিকল্প।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন/রুবেল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান।