বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

নারীরাই আজ বাংলাদেশকে পরিবর্তন করছে

সাহিদা সাম্য লীনা : মা রাতের আকাশটা ছিল নিরিবিলি, জ্যোৎস্নায় ভরা, বাতাসটা ছিল হিমেল হাওয়ার শাতের আগমনী কুয়াশায় ঘেরা।’’
মা যখন চলে যাবে প্রকৃতিটা এমনই বিরুপ ছিল!
মাকে মনে পড়ছে আজ ভীষণ! আজ তো মায়ের মৃত্যু দিবস।
খুব অল্প সময় মাকে পেয়েছি এ ভুবনে। মাকে যদি আরেকবার ফিরে পেতাম। এ চাওয়া হয়তো আবেগের! কিন্তু মাকে চাওয়া আবেগ হয়না। এ এক স্বর্গীয় টান, মা আর সন্তানের মধ্যেকার! সৃষ্টিকর্তার প্রতি অসীম চাওয়া আমার মাকে ভালো রাখো প্রতিটি সময়-মুহুর্ত!
আজ নিজের মা কে দিয়ে শুরু করেছি ,কেননা মা জাতি নিয়ে দুটো কথা আজ লিখবোও বলে। মা’দের, মা জাতির অবদান অতীত হতে আজ অবধি অনেক।

ছোট বেলা থেকেই আজ পর্যন্ত ভীষণ দুরন্ত, সাহসী আমি। গ্রামে মেয়েদের নিয়ে নানারকম কথা প্রচলিত। প্রায়ই বড়দের মুখে সেসব কথা শুনতাম। তবে, গ্রামে আমি থাকতে অনাভ্যস্ত ছিলাম, তাই কখনো সেসব পরোয়া করতাম না। একদিন চাঁদ রাতে বিচিত্র কোন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় শুভাকাঙ্খীকে সাথে নিয়ে বের হলাম ঘর থেকে। হাতে ছিল টেপ রেকর্ডার! রাতের বেলা তো ছবি তুলতে পারবনা। দিনের বেলা বের হতে চাইলেও বড়দের বারণ! তো রাতের বেলা হোক না সঙ্গী টেপ রেকর্ডারটা। অন্ততপক্ষে মানুষের কথা না হোক শিয়াল, কুকুর, ঝিঁঁ ঝিঁঁ পোকার শব্দ, অচেনা আওয়াজ তো রেকর্ড করতে পারবো।

কথা বলতে বলতে পরিচিত গন্ডি পেরিয়ে চলে এলাম অনেক দূর! রাস্তার চারপাশে দুএকটা চায়ের স্টল। লোকজন চা খাচ্ছে, আর গল্পে মশগুল! তারা কে হতে পারে! বেড়ার ফাঁকে উঁকি দিলাম। দেখলাম তোজ্জা, মোজ্জা, হাশিমা, ওরা গরীব, চাষাভূষা মানুষ” অথচ , কী এতো গল্প! কাকে নিয়ে? কান পাতলাম। যদিও এ কর্মগুলো ঠিক না, শুভাকাঙ্খী বাধা দিলো। পাড়া গা বলে কথা।

সে গ্রামেরই কন্যা আমি।মুরব্বী শ্রেণীর সবাই। তার উপর আমি মেয়ে মানুষ। এভাবে দেখলে সাংঘাতিক বেইজ্জতি! গ্রাম বলে কথা। যদিও গর্ব করে বলতে পারি আমার গ্রাম আজ অনেক উন্নত। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রামটা যেন এক রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। গ্রামের মানুষ রাজনীতি নিয়েই আলোচনা করে বেশী। ঐ মুহূর্তটা উপভোগের বারটা বাজালো আমার শুভাকাঙ্খী। তার প্ররোচনায় সেখান থেকে সরে আসতে বাধ্য হলাম। কেবলমাত্র নারী হবার দায়ে; পাছে যদি কেউ ভুল বুঝে অপবাদ জুড়ে দেয়। অথচ, চায়ের স্টলে তাদের গল্পের উপাদান বেশীরভাগ নারীদের নিয়ে। পুরো দেশে এখন নারীরা রাজনীতি হতে শুরু করে সব পেশাতে সফল।
শুরু করেছিলাম মাকে স্বরণ করে।

মা প্রসঙ্গ ছাড়া কোন কিছুই যেন পূর্ণতা পায়না। কেননা মা’ই তো রত্নগর্ভা। এক মা’ই তো দিতে পারে হাজারো রত্নগর্ভার জন্ম। আমাদের ছোট বাংলাদেশ রত্নগর্ভায় ভরপুর। সে জন্ম দিয়েছে অজস্র সুকন্যা। লক্ষ কোটি জনের প্রাণের বিনিময়ে যে দেশটি অর্জন করেছে স্বাধীনতা, আত্বমর্যাদা সেই দেশটির মানুষ কেন পিছিয়ে থাকবে চিন্তা চেতনায়  দৃষ্টি ভঙ্গিতে? মৌলিক অধিকার অর্জনের সংগ্রামে কেন তারা বারবার নিরাশ হবে? বাস্তবতা এই যে, আমাদের সমাজে পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে আছে নারী। কোন কোন সময় ইচ্ছে করেই সুকৌশলে নারীর অগ্রগতি রোধ করা হয়।

সমাজ ব্যবস্থা এমনই যে, নারীদের একাংশ শিক্ষা ও যোগ্যতায় পুরুষদের সমতুল্য হলেও প্রাপ্য অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর এ প্রান্তে এসে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন পেশায় নারীরা রাখছেন অসামান্য অবদান। বাংলাদশের নারীরা আজ অচলায়তন ভাঙছে। কুসংস্কার, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি বিরুপ পরিবেশ ও হাজার বছরের প্রাচীন প্রথার শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত হচ্ছে আজকের নির্ভীক সচেতন নারীরা। সাফল্য দেখাচ্ছে সেইসব পেশায় যেগুলো ছিল একচেটিয়া পুরুষদের দখলে। অগ্রসর নারীরা সকল বাধা বিঘ্ন পার করেছে স্বমহিমায়। সমুন্নত রেখেছে নারীত্বের আগামী পতাকা।

বাংলাদেশকেও আজ পরিবর্তন করছে নারীরা এবং এগিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। দৈহিক সৌন্দর্যের বদলে অন্তরের সৌন্দর্য তথা সৃষ্টিশীলতা ও কর্ম মুখরতার সৌন্দর্য দিয়ে সাফল্যের শীর্ষস্তরের নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছেন বা সৌন্দর্য তথা সৃষ্টিশীলতা ও কর্ম মুখরতার সৌন্দর্য দিয়ে সাফল্যের শীর্ষস্তরে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছেন বাংলাদেশের হাজারো রাজকন্যা।
তারা স্থাপন করেছেন অনুকরণীয় সব দৃষ্টান্ত ।

নারীর উপরে একটি অন্যায় হলে প্রতিবাদ গর্জে উঠছে এক গুচ্ছ কন্ঠস্বরের। এখন মি-টু আন্দোলনে আসছে নতুন কিছু ঘটনার আত্বপ্রকাশে! নারীদের সবচেয়ে বড় বাধা সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট । ঘটনার সাধু নায়করা এখন ভিতু সন্ত্রস্ত। কখন না জানি কে ফাঁস করে তার কথা!

লেখক- সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ফেনী, চট্টগ্রাম।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com