বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ অপরাহ্ন
আছিয়া পারভীন আলী শম্পা : সুস্থ থাকার জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়া উচিত।দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে হলে প্রতিদিন আমাদের বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত।
আজ এমনই একটি উপকারী সবজি ঢ্যাঁড়শের নানা পুষ্টিগুনের কথা বলব :
ঢ্যাঁড়শ আমাদের অতি পরিচিত একটি সবজি। খেতে ভীষণ সুস্বাদু। তবে পিচ্ছিল সবজি হওয়াতে অনেকেই এই সবজিটি খেতে পছন্দ করেন না। আপনি খেতে পছন্দ করেন আর নাই করেন ঢ্যাঁড়শ কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। না খেলেই বরং নিজেরই ক্ষতি। ঢ্যাঁড়শ এমন একটি সবজি যাকে ভর্তা,ভাজি বা ঝোল বা আরো নানা ভাবে খাওয়া যায়।
ঢ্যাঁড়শের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম ঢ্যাঁড়শে রয়েছে ৩৩ কিলোক্যালরি,শর্করা ৭.০৩ গ্রাম,ফাইবার ৫.৫ গ্রাম, প্রোটিন২.০ গ্রাম,টোটাল ফ্যাট ০.১ গ্রাম, ফোলেট ৮৮ ম্যা.গ্রা., ভিটামিন- কে ৫৩ ম্যা.গ্রা.,ভিটামিন-এ ৩৭৫ আই ইউ,ভিটামিন-ই ০.৩৬ মি.গ্রা. এবং ভিটামিন-সি ২১.১মি.গ্রা.।
ঢ্যাঁড়শ খাওয়ার উপকারিতা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর ভাল উৎস
হালকা বা গাড় সবুজ রঙের এই সবজিটিতেখুব ভাল পরিমাণে ভিটামিন-এ,ফ্লাভোনয়েডএবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমনঃবেটা ক্যারোটিন,জ্যান্থিন এবং লিউটিন রয়েছে।অন্যান্য সবজির তুলনায় ঢ্যাঁড়শে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর পরিমাণ বেশি।সুতরাং, নিয়মিত ঢ্যাঁড়শে
ত্বকের আর্দ্রতাবজায় রাখে
ঢ্যাঁড়শে থাকা ভিটামিন-এ,আমাদের ত্বকের জন্য এবং হেলদি মিউকোসার জন্য গুরুতপূর্ণ।অর্থাৎ ত্বক এবং মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ভিটামিন-এ সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ঢ্যাঁড়শে ভাল পরিমাণে ফ্লাভোনয়েড রয়েছে।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত প্রাকৃতিক ফ্লাভোনয়েড যুক্ত সবজি এবং ফলমূল গ্রহণ করলে লান এবং ওরাল ক্যাভিটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।
ফাইবার বা খাদ্য আঁশের চাহিদা পূরণ করে
বর্তমানে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ,উচ্চ কোলেস্টেরল,পাইলস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাতে ভুগে থাকেন।তার একটি প্রধান কারণ হল,প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ না করা। মাত্র ৮টি মিডিয়াম সাইজের ঢ্যাঁড়শ থেকে আমরা প্রায় ৩ গ্রাম মত ফাইবার বা আঁশ পেয়ে থাকি যা আমাদের দৈনিক ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবারের চাহিদা পূরণ করতে অনেক খানি সাহায্য করে।
ফোলিক এসিডের উৎস
গর্ভকালীন সময়ে ফোলেটের চাহিদা এবং গুরুত্ব দুটোই বেড়ে যায়।ঢ্যাঁড়শে বেশ ভাল পরিমাণে ফোলেট রয়েছে।যা গর্ভস্থ শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্টস দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়া,ঢ্যাঁড়শে বেশ ভাল পরিমাণে ফাইবার রয়েছ যা গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে
ঢ্যাঁড়শে খুব ভাল পরিমাণে ভিটামিন-কে রয়েছে যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এমন এনজাইমের কো-ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে।ফলে আমাদের কোথাও কেটে গেলে খুব দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।এছাড়া,ভিটামিন-কে আমাদের হাড় এবং হার্টের জন্য উপকারী।
এনিমিয়া প্রতিরোধ করে
ঢ্যাঁড়শে থাকা ফোলিক এসিড লোহিত রক্ত কনিকা তৈরি করতে সাহায্য করে।সুতরাং, নিয়মিত ঢ্যাঁড়শ খেলে এনিমিয়া দূর হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
ঢ্যাঁড়শ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।ঢ্যাঁড়শে থাকা ফাইবার ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
ন্যাচারাল কন্ডিশনার
চুলের যত্নে শ্যাম্পুর পাশাপাশি কন্ডিশনার ব্যবহার আমরা সবাই করে থাকি।তবেআসল নকলের চিন্তায় যাদের দিশেহারা অবস্থা।তারা ঢ্যাঁড়শ ব্লেন্ড করে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।পরিষ্কার চুলে সপ্তাহে ২ দিন ঢ্যাঁড়শ লাগালে প্রাকৃতিক ভাবে চুল হবে বাউন্সি এবং খুশকি মুক্ত।
কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধ করে
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে,নিয়মিতঢ্যাঁড়শ খেলে কিডনি ড্যামেজ হবার ঝুঁকি কমে।সুতারাং,কিডনির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে নিয়মিত ঢ্যাঁড়শ খান।
ঢ্যাঁড়শ গ্রহণের সাবধানতা:
প্রথমত,ঢ্যাঁড়শ পুষ্টিগুন সম্পন্ন একটি খাবার হলেও অতিরিক্ত পরিমানে ঢ্যাঁড়শ গ্রহণে ডায়রিয়া বা বদ হজম হতে পারে।যেসব লোকের অন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত গ্যাস বা পেটের অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। ঢ্যাঁড়শে থাকা এক ধরণের কার্বোহাইড্রেট যা ফ্রুক্টান নামে পরিচিত এই উপাদানের কারণে এমন হয়।
তবে,অল্প পরিমানে ঢ্যাঁড়শ গ্রহণে কোন সমস্যা নেই।
দ্বিতীয়ত,যাদের দেহে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ইউরিক এসিড আছে তারা অন্যান্য পিচ্ছিল সবজি যেমন: কচুর মুখী,লতি,পুঁইশাক এর মত ঢ্যাঁড়শ ও খাদ্য তালিকা থেকে, ইউরিক এসিদের মাত্রা স্বাভাবিক হবার আগ পর্যন্ত থেকে বাদ দেবেন।
যেহেতু আজকাল প্রায় সব ধরণের সবজিতে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক স্প্রে করা হয়।তাই রান্নার পূর্বে অন্তত ৩০ মিনিট একটি বড় বাটিতে ঢ্যাঁড়শ গুলো ভিজিয়ে রাখুন।এরপর ৩ থেকে ৪ মিনিটি রানিং ওয়াটারে ধুয়ে নিন।
রান্নার টিপস :
ঢ্যাঁড়শ রান্নার শুরুতে একটু টক কিছু দিয়ে রান্না করুন যেমনঃএক থেকে দুই চা চামচ লেবুর রস,তেতুলের টক বা ড্রাই আমের পাউডার তাহলে পিচ্ছিল ভাব চলে যাবে।আর একটি কথা লবণ রান্নার শুরুতে না দিয়ে,রান্নার শেষে দেবেন রান্নায় সুবিধা হবে।
আর,ঢ্যাঁড়শকে আরও সুস্বাদ করতে চাইলে চিংড়ি যোগ করতে পারেন।
লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড