রোল নম্বর কত? প্রশ্নটা শুনলেই আমি একটু বিব্রত হই! কারণ আমার ছেলের রোল নম্বর ৯। এটা বললেই সামনে থাকা মানুষটি কেমন এক অদৃশ্য তুলাদণ্ড হাতে নেন—আর বলেন, “আরও ভালো করতে হবে, পরের বার রোল ১ হতে হবে।” আমি চুপ থাকি। কারণ আমি জানি, রোল নম্বর সবসময় মেধার পরিচয় নয়।
আমাদের দেশে কখনো রোল ঠিক হয় ভর্তির ক্রমে, কখনো স্কুল বদলের কারণে, কখনো লটারিতে, কখনো শিক্ষকের নিজস্ব চিন্তাধারার মাধ্যমে। আবার, মেধার ভিত্তিতে হলেও—যার মুখস্ত করার ক্ষমতা বেশি, সে-ই পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পাবে।
আমার ছেলে ২য় শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সময়ও ভিন্ন পদ্ধতিতে রোল নম্বর প্রদান করা হয়েছে। মেধা অথবা প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে রোল নম্বর প্রদান করা হলেও হয়তো এমনই হতো। বিষয় সেটা না। আমার চোখের সামনে এমন অনেক শিশু আছে—যারা হয়তো খাতায় এলোমেলো লিখে কম নাম্বার পেয়েছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা অসাধারণ বুদ্ধিমান, সৃজনশীল, সমস্যার সমাধানে দক্ষ। অন্যদিকে, মুখস্তে চ্যাম্পিয়ন অনেকেই পরীক্ষায় রোল ১ পেলেও জীবনে বড় কিছু করতে পারেনি।
তবুও মানতেই হবে, অন্তত এইচএসসি পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা ও সমাজ নম্বরকে সবচেয়ে বড় মাপকাঠি বানিয়ে রেখেছে। নম্বর ভালো না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগই নেই। তাই রোল নম্বর আর নাম্বার—দুটোই এই সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
তবুও আমি চাই, আমরা যেন রোল নম্বর দিয়ে শিশুর মেধা মাপা বন্ধ করি। কারণ— রোল নম্বর দিয়ে যেমন মেধা যাচাই সম্ভব নয়, তেমনি রোল নম্বর ছাড়া মেধাও এই সিস্টেমে সবসময় কাজে লাগে না। সমাজের এই মানসিকতা বদলাতে হবে। যাতে শুধু রোল নয়—প্রকৃত যোগ্যতা, সৃজনশীলতা ও জীবনের বাস্তব দক্ষতাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু জীবনে বড় হওয়া? তা নির্ভর করে সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধান আর বাস্তব দক্ষতার ওপর—যা রোল নম্বরে মাপা যায় না।
লেখক :-
মোহাম্মদ আবদুর রউফ
ডাটা এন্ট্রি অপারেটর
উপজেলা প্রাইমারি এডুকেশন ট্রেনিং সেন্টার
বাহুবল, হবিগঞ্জ।