শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৬ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তত ৫০০ নেতা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করে মাঠে রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এবারের সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩০৫৬ জন।
এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৯৮ জন, যাদের বেশির ভাগই আসলে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি।
৯ই ডিসেম্বরের মধ্যে তারা সরে না দাঁড়ালে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি জোটের মনোনীত অনেক প্রার্থীকেই দলীয় প্রতিপক্ষের পাশাপাশি নিজ দলের নেতার বিরুদ্ধেও নির্বাচনী লড়াই করতে হবে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে নরসিংদী ৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এবারও মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, “প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ আছে। আশা করি নেত্রী বিবেচনা করবেন। আমি অপেক্ষা করছি।”
তবে এ আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জহিরুল হক ভুঁইয়া। যিনি ২০০৮ সালে নির্বাচিত হলেও ২০১৪ সালে মিস্টার মোল্লার কাছে হেরে যান। তার আশা মিস্টার মোল্লা এবার শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সরে দাঁড়াবেন।
আওয়ামী লীগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে এ ধরনের অন্তত সত্তরটি আসনে তাদের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে নির্বাচিত অন্তত ২০ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের জন্য এসব প্রার্থীকে বড় হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে একই ধরনের সমস্যা রয়েছে বিএনপিতেও। কুষ্টিয়া-২ আসনে সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
তিনি বলছেন, তৃণমূলের মতামত না নিয়েই তার বদলে অন্যদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যায়নপত্র দেয়া হয়েছে ফরিদা ইয়াসমিন ও রাগীব রউফ চৌধুরীকে। শেষ পর্যন্ত এ দুজনের মধ্যে একজনকে বেছে নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী তার জন্য কোন সংকট তৈরি করবে না। কারণ তার মতে এবার ভোটাররা প্রতীক দেখে ভোট দেবেন। তবে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা যাই বলুন না কেন, স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকেই দলের মনোনীতদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা নিয়ে দলীয় নেতারাও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আজ সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে তার দলের অবস্থান কি।
“মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে বলা যাবে না কে বিদ্রোহী। তবে শেষ পর্যন্ত কেউ বিদ্রোহী হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে আজীবনের জন্য,” বলেন তিনি।
ওদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি অনুধাবন করেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন বলে আশা করছেন তিনি। “কেউ ক্ষোভ থেকে বা প্রতিবাদ হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত জনগণের সাথে শামিল হয়ে তারা সরে দাঁড়াবেন,” বলেন তিনি।
তবে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আর দলীয় প্রতীক পাওয়ার সুযোগ নেই। শুধু দলীয় প্রত্যয়নপত্র পাওয়া বা নির্বাচন কমিশনে জোটের যে তালিকা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ দেয়া যাবে।
প্রতীক বা দলীয় সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা থেকে গেলে কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে দলগুলোর মধ্যে। আর সে কারণেই বিষয়টি নিয়ে দুটি দলেরই সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন বলে জানা গেছে।