শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন অভিযোগে বিতর্কিত ৩২ পদধারী নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে ওই পদগুলোকে শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই নেতাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদল ও জামায়াত-ছাত্রশিবিরে যুক্ত থাকা, বিবাহিত হওয়া এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকাসহ সংগঠনবিরোধী বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) লেখক ভট্টাচার্যের সই করা পৃথক দুইটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তারা দৈনিক জাগরণকে বলেন, তালিকায় থাকা ৩২ জনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক বিরোধীসহ বিভিন্ন অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। সে কারণেই তাদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কিছু নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে ২১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করা হলো। এই ২১ জন হলেন- সহ-সভাপতি তানজিল ভূঁইয়া তানভির, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আতিকুর রহমান খান, বরকত হোসেন হাওলাদার, শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ, সাদিক খান, সোহানী হাসান তিথী, মুনমুন নাহার বৈশাখী, আবু সাঈদ (সাস্ট), রুহুল আমিন, রাকিব উদ্দিন, সোহেল রানা ও ইসমাইল হোসেন তপু, দফতর সম্পাদক আহসান হাবীব, ধর্ম সম্পাদক তাজ উদ্দীন, উপ-দফতর সম্পাদক মমিন শাহরিয়ার ও মাহমুদ আব্দুল্লাহ বিন মুন্সী, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক বি এম লিপি আক্তার ও আফরিন লাবনী এবং সহসম্পাদক সামিয়া সরকার ও রনি চৌধুরী।
এছাড়া আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নেতাদের নিজ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ থেকে ১১ নেতাকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের পদ শূন্য করা হলো। এই ১১ জন হলেন- সহ-সভাপতি এস এম তৌফিকুল হাসান সাগর, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, বি এম শাহরিয়ার হাসান, হাফিজুর রহমান ও এস এম হাসান আতিক, স্বাস্থ্য সম্পাদক শাহরিয়ার ফেরদৌস, উপ-স্বাস্থ্য সম্পাদক রাতুল সিকদার ও শাফিউল সজিব, উপপ্রচার সম্পাদক সিজান আরেফিন শাওন, উপ-পাঠাগার সম্পাদক রুশী চৌধুরী এবং সহ-সম্পাদক আঞ্জুমানারা অনু।
এর আগে, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন শোভন-রাব্বানী।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছাত্রদল-জামায়াত শিবির ও ব্যবসায়ী, বিবাহিতদের পদ দেয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে তারা সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে পদপ্রাপ্ত কিছু নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা পদবঞ্চিতদের ওপর হামলা চালায়। পরে পদবঞ্চিতরা আন্দোলন শুরু করেন এবং ৯৯ জনের একটি তালিকাও প্রকাশ করেন। পদবঞ্চিতদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৫ মে মধ্যরাতে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
সে সময় তিনি জানিয়েছেন, নতুন কমিটির ১৭ জন বিতর্কিত বলে অভিযোগ পেয়েছেন তারা। পরে ২৯ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।
এদিকে, হামলার শিকার পদবঞ্চিতদের সঙ্গে ১৯ মে রাতেই আলোচনায় বসেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেদিন মধ্যরাতে তাদের ওপর গোলাম রাব্বানীর অনুসারীরা ফের হামলা করেন বলে অভিযোগ তুলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রথমে যারা দাবি আদায়ে অনশনে বসেন। পরে শুধু অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এমনকি ঈদও তারা টিএসসিতে পালন করেন।
পরে চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তাদের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকেই তাদের ওপর চাপ ছিল অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। অবশেষে ছাত্রলীগের অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শক্রমে ৩২ কেন্দ্রীয় নেতাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।