বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলের বদলির খবরে কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।
তার বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন সুনামগঞ্জবাসী। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে মানববন্ধন করবেন তারা।
ইতোমধ্যে সিভিল সার্জনের বদলির আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা মন্তব্য করেছেন।
এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদরের বাসিন্দা রফিক মিয়া লিখেছেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সততার দাম নেই। কতজনকে দেখলাম, কত কিছু বুঝলাম। অবশেষে এক রসুনের গোড়ায় সবাই এক। এতে বুঝা যায় সুনামগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতিবাজদের হাত কত লম্বা। সিভিল সার্জনের বদলিতে দুর্নীতিবাজদেরই বিজয় হয়েছে।’
ইমরান আলী নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একজন ভালো মানুষকে ২০ দিনের মাথায় বদলি করে দেয়া হয়েছে। তাহলে কি আমাদের কপালে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা কোনোটিই নেই। আমরা সাধারণ মানুষ, আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে এর প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। কারণ স্বাস্থ্যসেবায় আমরা সুনামগঞ্জবাসী সবসময় অবহেলিত।’
যোগদানের ২০ দিনের মাথায় সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে বদলি করা হয়। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বদলি করা হয়েছে।
জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. শামছুউদ্দিনকে সুনামগঞ্জের নতুন সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সদ্য বদলিকৃত ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে তাদেরকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
চলতি মাসের প্রথম দিকে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ পান ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোল। সুনামগঞ্জে যোগ দিয়েই স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের ঘোষণা দেন। স্বাস্থ্য খাতে নানা উন্নয়নেরও উদ্যোগ নেন তিনি। তার হঠাৎ করে বদলিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সুনামগঞ্জে।
এর আগে সুনামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের দুর্নীতি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডা. কল্লোল। সরকারি হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি হাসপাতালটিকে সুন্দরভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
গত ২১ জানুয়ারি ‘বাবার টিউশনির টাকায় বিসিএস ক্যাডার, হারাম এক টাকাও খাব না’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ হয়। সেখানে সুনামগঞ্জ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানান ডা. কল্লোল।
তার এমন প্রতিশ্রুতিতে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে হতাশায় থাকা সুনামগঞ্জবাসী নতুন করে স্বপ্ন দেখছিল। আগের সিভিল সার্জনের আমলে নানা দুর্নীতি ও হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। সেটি ভাঙার কথা কথা বলেছেন ডা. কল্লোল। পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলা তৈরির কথা দিয়েছিলেন তিনি। এরই মধ্যে এল তার বদলির আদেশ।
সিভিল সার্জনের হঠাৎ বদলির আদেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উন্নয়নকর্মী মুজাহিদুল ইসলাম মজনু বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে সিভিল সার্জন ডা. কল্লোল বদলি করা হয়েছে। ১৩ মাস ধরে কেবিন ভাড়া, টিকিট বিক্রির টাকা ও বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল টেস্টের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। এসব দুর্নীতি ধরে ফেলায় সিন্ডিকেটের শত্রু হয়ে যান সিভিল সার্জন। এজন্য একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাকে মাত্র ২০ দিনেই বদলি করা হলো।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী অমিত তরফদার অপূর্ব বলেন, সুনামগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ডা. কল্লোলের মতো একজন দক্ষ কর্মকর্তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাকে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তারেক বলেন, আমরা নতুন সিভিল সার্জনের কর্মপরিকল্পনা জেনে অনেক আশাবাদী ছিলাম। ভালোমানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার যে আশা তৈরি হয়েছিল তা শেষ করে দেয়া হলো। এর প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছি। আমরা ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলকে এখানে রাখতে চাই।