বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

‘শতভাগ বিদ্যুতায়ন’, অথচ খাসিয়া পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ নেই

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে আদমপুর বনবিট এলাকায় ৯৫টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি। খাসিয়া পুঞ্জির বাইরে বস্তি এলাকায় আরও ৬০ পরিবার নিয়ে কালেঞ্জি গ্রাম। সম্প্রতি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুয়নের ঘোষণা করা হলেও এই দু’টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন না থাকায় প্রায় দেড়শ’ পরিবারের সহস্রাধিক লোক বিদ্যুতের আলো বঞ্চিত। এছাড়াও যাতায়াতের দুরবস্থা, রাস্তা ও কালভার্ট না থাকা এসব নানা সমস্যায় জর্জরিত কালেঞ্জী ও খাসিয়া পুঞ্জির সদস্যরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৫শ’ ফুট উপরে পাহাড়ি টিলার স্তরে স্তরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। আঁকাবাঁকা পথে ১৫২টি সিড়ি বেঁয়ে টিলার উপরে পুঞ্জির হেডম্যানসহ অন্যদের বাসায় পৌঁছতে হয়। খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫ পরিবারে লোকসংখ্যা প্রায় ৬শ । তাদের আয়ের প্রধান উৎস জুমে পান ও লেবু চাষ। পুঞ্জির পার্শ্ববর্তী কালেঞ্জি গ্রামেরও ৫০টি পরিবারে প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক লোকের বসবাস। তবে বর্তমান যুগেও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি এ দু’টি গ্রামে। রাস্তারও বেহাল দশা।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের অভিযোগ, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করেছে। অথচ এই দু’টি গ্রাম এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আসেনি। কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫ পরিবারের দৈনন্দিন নানা সমস্যায় জর্জরিত পুঞ্জির সদস্যরা। বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দু’টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হচ্ছে না। পুঞ্জির নারী পুরুষ সদস্যরা টিলার নিচের কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে টিলার উপরে তুলে নিয়ে আসেন। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত হলে বৈদ্যুতিক পাম্প বসিয়ে নিচ থেকে টিলার উপরে ঘরে ঘরে পানি তোলা যেতো। খাসিয়া সদস্যদের আয়ের প্রধান উৎস পাহাড়ি টিলায় জুমের পান। খাসিয়া পান বৃহত্তর সিলেটের ভাটি অঞ্চল ও যুক্তরাজ্যে সরবরাহ করা হয়।

যাতায়াত ব্যবস্থার কারণেও কালেঞ্জি খাসিয়া সম্প্রদায় ও কালেঞ্জি গ্রামের লোকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আদমপুর বাজার থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে সংরক্ষিত বনের মাঝে কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও পুঞ্জিঘেষা কালেঞ্জি গ্রাম।

কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি হেডম্যান (মন্ত্রী) রিটেঙেন ঘেরিয়েম বলেন, আমাদের পুঞ্জির স্কুল-কলেজ পড়ুয়া প্রায় ২শ’ ছাত্রছাত্রী বেশীর ভাগ সময়ে পায়ে হেঁটে ৯ কিলোমিটার পার হয়ে আদমপুরে যেতে হয়। সেখান থেকে গাড়ি যোগে কলেজে যেতে হয়। যাতায়াতের দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে খাসিয়া পরিবারগুলো দৈনন্দিন হাট বাজারে ৯ কিলোমিটার দূরের আদমপুর বাজারে যেতে হয়। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন বলেন, আদমপুর বনবিট অফিস থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হয়ে গেলে এই পুঞ্জির যাতায়াত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের নজরে রয়েছে এবং নিজেও চেষ্টা করছেন বলে জানান। তবে বিদ্যুতায়নের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র দাশ বলেন, এ দুটি এলাকা সংরক্ষিত বনের আওতায় থাকায় বনবিভাগের বিধিনিষেধ থাকার কারণে এখানে বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব হয়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com