শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : ভালো করলেন অনেকেই। তবে শেষে লড়াইটা হয়ে দাঁড়াল মেহেদি হাসান বনাম মুক্তার আলি। ব্যাট হাতে দারুণ ফিফটির পর বল হাতে প্রতিপক্ষের ঝড় থামিয়ে জিতলেন মেহেদি। তার হাত ধরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ঢাকাকে হারাল রাজশাহী।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ২ রানে জিতেছে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬৯ রান তোলে দলটি। ৫ উইকেটে ১৬৭ রানে থামে বেক্সিমকো ঢাকা।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ঢাকার প্রয়োজন ছিল ৯ রান। আগের ওভারে তিন ছক্কা হাঁকানো মুক্তার ছিলেন স্ট্রাইকে। ব্যাটে-বলে আলো ছড়ানো মেহেদি দুর্দান্ত শেষ ওভারে দিলেন কেবল ৬ রান।
ইয়র্কার লেংথে করা প্রথম তিনটি বলই ডট। অফ স্পিনারের পরের বলে বাউন্ডারি হাঁকান মুক্তার। পঞ্চম বলটি ছিল নো, ফ্রি হিট পাওয়া বলেও ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। শেষ বলে নিতে পারেন মোটে একটি সিঙ্গেল।
বিপর্যয়ে নেমে প্রতি-আক্রমণে ঝড় তোলাকে যেন অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন মেহেদি। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই তাকে দেখা যায় এই চেহারায়। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শুরুতেও এই অলরাউন্ডার ধরা দিলেন বিধ্বংসী চেহারায়। তার ফিফটি ও নুরুল হাসান সোহানের কার্যকর ইনিংসে ধস পেরিয়ে রাজশাহী গড়ে ভালো স্কোর।
৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৩২ বলে ৫০ রান করেন মেহেদি। ৩ ছক্কায় ২০ বলে ৩৯ করেন সোহান।
ঢাকার অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মুক্তার চার ওভারে ২২ রানে নেন ৩ উইকেট। পরে ব্যাট হাতেও দলকে জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন তিনি; কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ১৬ বলে তিন ছক্কা ও এক চারে অপরাজিত থাকেন ২৭ রানে।
মিরপুরে মঙ্গলবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহীর শুরুতে রান বাড়ানোর কাজটি করেন আনিসুল ইসলাম ইমন। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চারশর বেশি রান করা এই ওপেনার এবার দেখালেন, টি-টোয়েন্টির দাবিও মেটাতে পারেন তিনি। নিজের খেলা প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকানো ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান পরেও খেলেন দারুণ কিছু শট।
১২ রানে অবশ্য দুই দফায় বেঁচে যান তিনি রুবেলের বলে। প্রথমে স্লিপে ক্যাচ ছাড়েন ইয়াসির আলি রাব্বি। পরের বলে ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি বোলার নিজেই।
নাজমুল হোসেন শান্তর শুরুটা ছিল একটু রয়ে-সয়ে। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ আক্রমণে আসার পর হাত খোলেন রাজশাহী অধিনায়ক। চার বলের মধ্যে মারেন দুটি ছক্কা। এরপর আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন সীমানায় (১৬ বলে ১৭)।
তিনে নামা রনি তালুকদার ও চারে নামা মোহাম্মদ আশরাফুল টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। দুজনকেই ফেরান মুক্তার। ছক্কার চেষ্টায় লং অফে ধরা পড়েন রনি (৮ বলে ৬)। পয়েন্টে মোহাম্মদ নাঈম শেখের অসাধারণ ক্যাচে ফেরেন আশরাফুল (৯ বলে ৫)। গুলির বেগে আসা বল ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় হাতে জমান নাঈম।
রান বাড়ানোর কাজ করছিলেন যিনি, সেই ইমনও ছুঁড়ে আসেন উইকেট। অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে হন স্টাম্পড। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ করেন তিনি ২৩ বলে।
দ্রুত একটি রানের চেষ্টায় ওই ওভারেই রান আউট হয়ে যান ফজলে মাহমুদ রাব্বি। রাজশাহীর রান তখন ৫ উইকেটে ৬৫।
সেখান থেকে মেহেদি ও সোহানের জুটি। উইকেটে যাওয়ার পরপরই নাঈম হাসানকে বিশাল ছক্কায় গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন মেহেদি। পরের ওভারে নাসুমকে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে ওড়ান সোহান। নাঈমের করা পরের ওভারে ছক্কা মারেন দুজনই।
মূল স্ট্রাইক বোলার রুবেল হোসেনকে আক্রমণে ফেরান মুশফিক। প্রথম বলেই বাউন্ডারির পর দুর্দান্ত ফ্লিকে ছক্কা মারেন মেহেদি। জুটি ভাঙতে এবার সাব্বির রহমানের হাতে বল তুলে দেন মুশফিক। প্রথম বলেই লং অন দিয়ে ছক্কায় তাকে স্বাগত জানান মেহেদি।
সোহান-মেহেদি জুটির পঞ্চাশ আসে ২৭ বলে। রান আসতে থাকে এরপরও। শেষ পর্যন্ত জুটি ভাঙে সোহানের বিদায়ে। মুক্তারকে স্কুপ করতে গিয়ে মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরের ওভারে মেহেদি থামেন মেহেদি রানার বল আকাশে তুলে।
এই দুজনর বিদায়ের পর দ্রুত রান আর আসেনি। তবে শেষ বলে ছক্কায় শেষটা ভালো করেন ফরহাদ রেজা।
রান তাড়ায় শুরুতেই ঝড় তোলেন তানজিদ হাসান। রান আউটে কাটা পড়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি এই বিস্ফোরক ওপেনার। আরেক ওপেনার ইয়াসির যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।
ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। দুটি করে ছক্কা ও চারে ১৭ বলে ২৬ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আরাফাত সানির বলে ধরা পড়েন সীমানায়।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানো ঢাকা প্রতিরোধ গড়ে মুশফিকুর রহিম ও আকবর আলির ব্যাটে। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৫৩ বলে দুই জনে গড়েন ৬৯ রানের জুটি। ২৯ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৩৪ রান করা আকবরকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ফরহাদ।
এরপর বেশিক্ষণ টিকেননি মুশফিক। ইবাদত হোসেনের স্লোয়ার বলে স্কুপ করার চেষ্টায় ধরা পড়েন কিপারের গ্লাভসে। অধিনায়ক এক ছক্কা ও তিন চারে ৩৪ বলে করেন ৪১।
জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৩০ রান। আগের তিন ওভারে ১১ রান দেওয়া ফরহাদের ওভার থেকে ২১ রান তুলে নিয়ে সমীকরণ সহজ করে ফেলেছিলেন মুক্তার। বড় শট খেলার জন্য পরিচিত এই অলরাউন্ডার শেষ ওভারে মেলাতে পারেননি ৯ রানের সমীকরণ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী: ২০ ওভারে ১৬৯/৯ (শান্ত ১৭, ইমন ৩৫, রনি ৬, আশরাফুল ৫, ফজলে রাব্বি ০, সোহান ৩৯, মেহেদি ৫০, ফরহাদ ১১*, সানি ০, মুকিদুল ০, ইবাদত ২*; রুবেল ৪-০-২৯-০, মেহেদি রানা ৪-০-৩১-১, নাসুম ৪-০-৪১-১, মুক্তার ৪-০-২২-৩, নাঈম ৩-০-৩২-১, সাব্বির ১-০-১১-০)।
বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১৬৭/৫ (তানজিদ ১৮, ইয়াসির ৯, নাঈম ২৬, মুশফিক ৪১, আকবর ৩৪, সাব্বির ৫*, মুক্তার ২৭*; মেহেদি ৪-০-২২-১, ইবাদত ৪-০-৩৬-১, মুকিদুল ৪-০-৩৫-০, সানি ৪-০-৩৮-১, রেজা ৪-০-৩৩-১)
ফল: মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী ২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান