সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

চট্টগ্রামকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মাহমুদউল্লাহর খুলনা

তরফ নিউজ ডেস্ক : শেষ বলটি উড়ে গেল মাঠের বাইরে। ফিল্ডারদের সেদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই। তাদের অপেক্ষা ছিল স্রেফ বলটি হওয়ার। জয় তো নিশ্চিত আগেই! বল যখন ভেসে চলেছে সীমানার দিকে, খুলনার ক্রিকেটাররাও তখন মাঠে ছুটে চলেছেন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে। মাহমুদউল্লাহ ছিলেন লং অফে। সেখান থেকে ছুটে গেলেন লাফাতে লাফাতে। একটু পরই তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন ওপরে। সতীর্থরা বিজয় মিছিল করছেন তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে!

গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের ক্রিকেটাররা তখন মাঠের আলোর ঝলকানি ছেড়ে বেছে নিয়েছেন ড্রেসিং রুমের আড়াল আশ্রয়। টুর্নামেন্ট জুড়ে তাদের ছিল সদর্প পদচারণা, কিন্তু ফাইনালে তাদের সঙ্গী হারের হতাশা। ৫ রানের জয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের চ্যাম্পিয়ন জেমকন খুলনা।

খুলনার জয়োল্লাসের মধ্যমণি মাহমুদউল্লাহ, ম্যাচের প্রেক্ষাপেট এর চেয়ে আদর্শ ছবি আর হয় না। অধিনায়কের অসাধারণ ইনিংসেই তো গড়া দলের জয়ের ভিত।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার খুলনা ২০ ওভারে তোলে ১৫৫ রান। শেষ ওভার পর্যন্ত দুলতে থাকা ম্যাচে চট্টগ্রাম থমকে যায় ১৫০ রানে।

শুরুর বিপর্যয় ও মাঝের মন্থরতা ঠেলে খুলনাকে এগিয়ে নেয় মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। যখন উইকেটে গিয়েছিলেন তিনি, দলের রান তখন সপ্তম ওভারে ৩ উইকেটে ৪৩। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত খেলে অপরাজিত থেকে যান ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ বলে ৭০ রান করে। টি-টোয়েন্টিতে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ৬৪।

ম্যাচের শুরুটা খুলনার ছিল যাচ্ছেতাই। টস জিতে বোলিংয়ে নামা চট্টগ্রামকে শুরুতেই দারুণ এক উপহার দেন জহুরুল ইসলাম। আগের দুই ম্যাচে ফিফটি করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ম্যাচের প্রথম বলেই নাহিদুল ইসলামকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অফে।

নাহিদুল ও চট্টগ্রামের পরের উইকেটও প্রতিপক্ষের দেওয়া উপহার। শরিফুল ইসলামের বলে কিপারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা পাওয়ার পর ইমরুল কায়েস উইকেট বিলিয়ে আসেন নাহিদের বল লং অফে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়ে।

সাকিব আল হাসান না থাকায় ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পান আরিফুল হক। জাকির হাসানের সঙ্গে তার জুটি খানিকটা এগিয়ে নেয় খুলনাকে। তবে দুজনই থিতু হয়ে বিদায় নেন দলকে বিপদে ফেলে।

১৩ রানে জীবন পেয়ে জাকির করতে পারেন ২০ বলে ২৫। মোসাদ্দেক হোসেনের বাজে এক বল তিনি আরও বাজে শটে তুলে দেন মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে। আরিফুলের ২১ রান আসে ২৩ বলে।

মাহমুদউল্লাহর শুরুটা ছিল মন্থর। এক পর্যায়ে রান ছিল তার ১৪ বলে ১০। পরে মোসাদ্দেকের বলে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে গা ঝারা দেন। রানের গতি বাড়ে একটু।

আরিফুল বিদায় নেওয়ার পর শুভাগত হোম খানিকটা সঙ্গ দেন অধিনায়ককে। তবে শুভাগত ও শামীম হোসেনকে পরপর হারিয়ে আবার বিপদে পড়ে যায় খুলনা। ১২ বলে ১৫ রান করে ফেরেন শুভাগত। মাহমুদউল্লাহকে রান আউট থেকে বাঁচাতে নিজে উইকেট ছেড়ে আসেন তরুণ শামীম।

দল তখন তাকিয়ে কেবল মাহমুদউল্লাহর দিকেই। অধিনায়ক হতাশ করেননি। শেষ দিকেও দলকে এনে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ রান। শেষ ওভারে সৌম্য সরকারকে পেয়ে মেরেছেন দুটি চার ও একটি ছক্কা।

চ্যালেঞ্জিং রান তাড়ায় খুলনার শুরুটা হয় নিরাপদ। দুই দলের আগের লড়াইয়ে ৫ উইকেট নেওয়া মাশরাফিকে কোনো উইকেট দেয়নি না তারা। প্রথম ৩ ওভারে ২৩ রান এসে যায় উইকেট না হারিয়ে।

এরপরই ছন্দপতন। শুভাগত হোমের বলে বোল্ড হয়ে যান সৌম্য। পরের ওভারে আল আমিন হোসেন এলবিডব্লিউ করে দেন মোহাম্মদ মিঠুনকে।

চট্টগ্রামের আশা হয়ে তখনও টিকে লিটন দাস। টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালেও। শহিদুল ইসলামের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে বড় এই বাধা সরায় খুলনা। বল করে শহিদুল ফলো থ্রুতে নিজেকে সামলে দারুণ ক্ষীপ্রতায় ছুটে গিয়ে ফুল লেংথ ডাইভ দিয়ে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে দেন লিটনকে (২৩ বলে ২৩)।

এরপর সৈকত আলি এক পাশ আটকে রাখেন অনেকক্ষণ। শামসুর রহমান (২১ বলে ২৩), মোসাদ্দেকরা (১৪ বলে ১৯) তাকে সঙ্গ দিয়ে যান। চট্টগ্রাম লড়াই চালিয়ে যায়। তবে রান-বলের সমীকরণ কঠিন হয়ে ওঠে ক্রমশ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com