শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: ভারতে অর্ধলক্ষ মানুষ ঘরহারা

ছবি: রয়টার্স

তরফ নিউজ ডেস্ক: ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।
রয়টার্স জানিয়েছে, এ ঝড়ের তাণ্ডবে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে ঘর হারিয়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ; জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সহস্রাধিক গ্রাম, অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।

বেলা সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগ বা চোখ বালাশোরের কাছ দিয়ে পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসে। তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।

উপকূল অতিক্রম করার পর স্থালভাগে তাণ্ডব চালিয়ে এবং বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে ইয়স। আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে মধ্যরাতের আগেই সেটি স্থল নিম্নচাপের রূপ পাবে বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের ধারণা।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে গেলেও ভারি বষ্টির অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। পাশাপাশি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পূর্বাভাস থাকায় লোকজনকে এখনই আশ্রয়কেন্দ্র না ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় তার অফিস নবান্নে বসে পর্যবেক্ষণ করছেন পুরো পরিস্থিতি। স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের সীমান্তবর্তী শহর দীঘায় ঝড়ের সময় সাগরে ভেসে গেছেন এক ব্যক্তি।

জলোচ্ছ্বাসের সময় উঠে আসা পানিতে সৈকত শহর দীঘা অনেকটাই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ঝড়ের সময় কেবল এ রাজ্যেই ১১ শ গ্রাম জলোচ্ছ্বাস প্লাবিত হয়েছে। প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে অন্তত ১০০ জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, তার রাজ্যের নিচু এলাকাগুলোতে অন্তত তিন লাখ কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাগর থেকে উঠে আসা লোনা জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত। কেবল পশ্চিমবঙ্গেই এক কোটির মত মানুষ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মমতার ধারণা।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যে এলাকা দিয়ে স্থলভাগে উঠে এসেছে, সেই ওড়িশায় অন্তত ১২০টি গ্রাম প্রবল বর্ষণ আর জলোচ্ছ্বাসে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা সুরেশ মহাপাত্র বলেছেন, এসব গ্রামের বাসিন্দাদের প্রায় সবাইকে আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় মঙ্গলবারের মধ্যেই ওড়িশা উপকূলের নিচু এলাকাগুলো থেকে আড়াই লাখ এবং পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ উপকূল থেকে ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওড়িশার বীর সুরেন্দ্র সাই বিমানবন্দর, দুর্গাপুর বিমানবন্দর বুধবার সকাল থেকে বন্ধ রাখা হয়।

ঝড়ের কারণে ভারতীয় রেলওয়ে ৩৮টি দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রা বাতিল করে। কলকাতার নয়টি ফ্লাইওভারেও সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার।
বুধবার পূর্ণিমা এবং চন্দ্রগ্রহণ থাকায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ে জোয়ারে। ঝড় যখন উপকূল অতিক্রম করে, তখন ছিল ভরা কাটাল। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তখনই জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়ে যায়।

ঝড়ের সময় পশ্চিমবঙ্গের দীঘা সৈকত থেকে আসা ছবিতে দেখা গেছে, প্রবল বাতাসে নুয়ে পড়ছে গাছ। উপকূলীয় অনেক এলাকায় জোয়ারের পানি উঠে রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। হাঁটু পানির মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ।

ওড়িশার জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক ও বালাশোর জেলা ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা লেগেছে সবচেয়ে বেশি। আর পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদেনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছেছে ঝড়ো বাতাসের তাণ্ডব।

ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় টর্নেডোর আঘাতে দুইজনের মৃত্যু হয়, বিধ্বস্ত হয় শ খানেক ঘরবাড়ি।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এই নতুন দুর্যোগে সংক্রমণ এড়ানো আর রোগী সামলানোর কথাও ভাবতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।
ওড়িশার ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকাগুলোর কোভিড হাসপাতালে অক্সিজেন এবং বিদ্যুতের সঙ্কট যেন না হয়, সে ব্যবস্থা আগেই করে রাখার কথা বলেছিলেন বিশেষ রিলিফ কমিশনার পি কে জেনা।

উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য উপকূলে প্রস্তত রাখা হয়েছে ভারতের নৌবাহিনীর সদস্যদেরও। বিশাখাপত্তমে নৌবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদরদপ্তর থেকে পুরো কার্যক্রমের সমন্বয় করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজের জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের রেকর্ড ১১৫টি দলকে এবারের ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মাঠে নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

ঘূর্ণিঝড়টির গতিমুখ বাংলাদেশের দিকে না হলেও এর প্রভাব বলয়ে খুলনা উপকূল ছিল বলে প্রায় ১৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। দুর্ঘটনা এড়াতে নদীপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ করে দিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ।

সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতি ভারি বর্ষণের সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুটের বেশি উচ্চতার জোয়ারের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এসব উপজেলার মানুষের সহায়তায় সাড়ে ১৬ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com