বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

শ্রীমঙ্গলে হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শ্মশানের ভূমি উদ্ধার

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর উত্তরসুর এলাকায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের একটি শ্মশানের জমি হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দখলকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, হিন্দু জনগোষ্টির দাহকার্যের জন্য আদিকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসা গোপাট শ্রেণীর এই শ্মশানের জমি দখল করে রাস্তা নির্মানের আয়োজন করে একটি ভূমি জবরদখলকারী চক্র। স্থানীয় মুসলমান জনগোষ্টির সহায়তায় সে অবৈধ রাস্তা তুলে দিয়ে শ্মশানের জমি উদ্ধার করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। বুধবার (৩০ জুন) সকালে স্থানীয় হিন্দু ধর্মালম্বীরা এলাকার সাধারন মুসলিম সমাজকে নিয়ে দখলকৃত জমির উপর নির্মিত রাস্তাটি তুলে দিয়ে শ্মশানের জমির চৌহদ্দিতে বেড়া দিয়ে বেদখলীয় জমি উদ্ধার করেন।

এ ব্যপারে স্থানীয় সমাজ সেবক আবু তোয়াহিদ আকাশ জানান, উত্তর উত্তরসুর ও দক্ষিণ উত্তরসুর ভান্ডারীপাড়া নামক স্থানে উত্তরসুর মৌজার জে.এল নাম্বার ১২০, খতিয়ান নাম্বার ০১, দাগ নং ৩৪০৮ জায়গার পরিমান ০৭ একর; এই জমির উপর এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আদিকাল থেকে মরদেহ দাহ করে আসছেন। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে কতিপয় একটি কুচক্রী মহল শ্মশানের জমির উপর দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণের পায়তারা করেন। শ্মশানের জমির অংশে রাতের আধারে রাস্তা নির্মাণ করে এলাকার শান্তিপ্রিয় সাধারন হিন্দু -মুসলিমদের মধ্যে চলমান সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। তাই আমরা এলাকাবাসী হিন্দু-মুসলিম যৌথভাবে মিলে দখলকৃত রাস্তাটি ভেঙ্গে দিয়েছে। আমরা যুগ যুগ ধরে হিন্দু -মুসলমান সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করছি, জবরদখলকারী কোন গোষ্টিকে আমরা কিছুতেই বন্ধন নষ্ট হয় এমন কোন কর্ম তা যে উছিলায়ই হোক না কেন আমরা করতে দেব না। প্রতিবেশীর হক বা সম্পদ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা ভবিষ্যতে করা হলে সবাই মিলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আমরা হিন্দু -মুসলমান সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টিকারীকে সামান্যতম ছাড় দেওয়া হবে না, তা যেই হোক না কেন।

স্থানীয় হিন্দু জনগোষ্টির বাসিন্দা নকুল চন্দ্র দেব বলেন, কিছু দুষ্কৃতিকারী শ্মশানকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পায়তারা করে। আমরা মুসলমান ভাইদের সক্রিয় সহায়তায় বিগত সোমবার রাতে তৈরী ও অপদখলকৃত রাস্তা পুনরুদ্ধার করি। মূলত, এখানে একটি ভূমিখেকো চক্র সক্রিয়। উল্লেখ্য, এখানে লক্ষী দেবী ও দূর্গাদেবী ট্রাস্টের নামে ৫২ হাল ( প্রায় ৬০০ বিঘা ) জমি রয়েছে যা অনেকেই বে-আইনী ভাবে ভোগদখল করছেন। এ সম্পত্তি উদ্ধারেও তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পশ্চিম শ্রীমঙ্গল গ্রামের বাসিন্দা মো: ইন্দাদ মিয়া জানান, ছোট বেলা থেকে দেখে আসছেন ওই সব গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা এখানে দাহ ও সমাধি দিয়ে আসছেন। কয়েক বছর আগে হাইল হাওরের পাশ ঘিরে বেশ কিছু বসতি স্থাপিত হয়। এদের জন্য ১৬ফুট চওড়া একটি সরকারী রাস্তাও আছে। পাশে একটি গোপাটও রয়েছে। ওই রাস্তা রেখেও এর পাশে তারা শ্মশানের উপর দিয়ে সোমবার রাতে আরেকটি রাস্তা করে নেয়। এ ছাড়াও ওই গ্রামের কিছু লোক কিছুদিন ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মারা গেলে এখানে দাহকার্য করতে বাধা দিচ্ছে। যা আমরা সাধারন মুসলমানরা কখনোই সমর্থন করি না। এরই ফলশ্রুতিতে এ সম্মিলিত প্রয়াস।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেছার আহমদ জানান, এটি গোপাট শ্রেণীর জমি। এর একটা অংশ হিন্দু ধর্মালম্বীরা শ্মশান হিসেবে ব্যবহার করেন। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন, শীঘ্রই সরজমিন পরিদর্শন করে তারা সমস্ত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com