রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ না করায় উষ্মা প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ বুধবার বলেছে, গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আদালতের নমনীয়তাকে ‘দুর্বলতা’ মনে করে থাকলে তা হবে তাদের বড় ভুল।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয় প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে। তাকে বাঁচাতে একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
রাসেল সরকারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাবেক সাংসদ উম্মে কুলসুমের করা এক রিট আবেদনে চিকিৎসা খরচ বাদেও ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইনকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। পরে আপিল বিভাগেও ওই আদেশ বহাল থাকে।
এরপর গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য এক মাস সময় পায়।
ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও আর কোনো অর্থ তারা পরিশোধ না করায় গত ১৫ মে আদালত আরও সাত দিন সময় দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে পুরো অর্থ পরিশোধের বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়।
সে অনুযায়ী বুধবার বিষয়টি আদালতে এলে বিচারক প্রথমেই গ্রিনলাইন পরিবহনের আইনজীবী অজি উল্লাহর কাছে জানতে চান- আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি না।
আইনজীবী অজি উল্লাহ তখন বলেন, “গত ২০ তারিখ থেকে গ্রিনলাইন পরিবহন আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই আমি নিজেকে এই মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তাদের আচরণে খুবই অখুশি।”
এরপর রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজাকে সামনে ডেকে বিচারক জানতে চান, গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত রসেলের চিকিৎসায় কী দিয়েছে।
আইনজীবী রেজা তখন আদালতকে বলেন, গ্রিনলাইন চিকিৎসা বাবদ ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। এর আগে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে। ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা দেওয়ার যে নির্দেশনা ছিল- সে ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করেনি।”
আদালত এ সময় জানতে চায়, রাসেল এখন হাঁটাচলা করতে পারেন কি না।
আইনজীবী রেজা তখন বলেন, “কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে, এখন ক্র্যাচে ভর করে হাঁটতে পারে।”
আদালত কক্ষের পেছনের সারিতে বসা রাসেল তখন ক্র্যাচে ভর করে ডায়াসের কাছাকাছি আসেন।
এ পর্যায়ে রাসেলের আইনজীবী আদালতকে বলেন, “আমার যা মনে হয় তারা (গ্রিন লাইন) অর্থ না দেওয়ার প্রক্রিয়া খুঁজছে। গণমাধ্যমে সেরকমই খবর এসেছে।”
বিচারক তখন বলেন, “যারা ব্যবসা করবে তাদের মানবীয় মূল্যবোধ থাকা উচিৎ। আমাদের সব উদ্বেগ সামগ্রিকভাবে আদেশে প্রতিফলিত হয় না। সবকিছু তো আর আদালতের আদেশ দিয়ে হয় না। আমরা শপথ নিয়েছি, আমাদের কারো প্রতি কোনো রাগ, অনুরাগ, বিরাগ নেই। কিন্তু আমাদের কাছে গ্রিনলাইনের আচরণ ভাল লাগেনি।”
এরপর আইনজীবী অজিউল্লাহকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, “আপনি তো এখনও আইনজীবী আছেন। যোগাযোগ করেন। নমনীয়তাকে দুর্বলতা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।”
পরে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন দিন রেখে শুনানি স্থগিত করে আদালত।