বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : প্রবাসীরা করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব এবং তার পরবর্তী সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মোকাবিলায় পরিবারের জন্য বেশি পরিমাণে অর্থ পাঠানোর ধারা অব্যাহত রাখায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ৩ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর শেষে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করায় রেমিটেন্স অনেক বেশি অবদান রেখেছে।সাত মাস আগেও গত বছরের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
ওই দিন (৩০ ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রিজার্ভের আকার একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। যা করোনা প্রাদুর্ভাবের পরেও দেশের অর্থনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করে।রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠানোর লক্ষ্য অর্জন করায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
দেশে অধিক হারে রেমিটেন্স আসার কারণ সম্পর্কে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিটেন্স বাড়ার তিনটি কারণ রয়েছে।
প্রথমত, গত বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে করোন ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ও বন্যার পর অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা করতে অনেক প্রবাসী বেশি পরিমাণে অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, আমানতের সুদহার, বিশেষ করে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের বিপরীতে সুদের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। যা কারণে প্রবাসীদের অনেকেই দেশে বিনিয়োগের জন্য অধিক পরিমাণে অর্থ পাঠাতে উৎসাহী হয়েছে। পরিস্থিতি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এ দু’টি কারণই আগামী দিনে অধিক পরিমাণে রেমিটেন্স দেশে আনতে অবদান রাখবে।
তৃতীয়ত, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের তিন শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া। সরকার ২ শতাংশ এবং কিছু ব্যাংক আরও ১ শতাংশ দিয়ে হচ্ছে। রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহী করার উদ্যোগ ফল দিয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনা মহামারিতে বিধিনিষেধের কারণে বিদেশ যাতায়াত বন্ধ থাকায় অর্থ পাচারের পরিমাণও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। এতে নগদ ডলারের চাহিদাও কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে অবৈধ অর্থ ব্যবসায়ীরা ডলারের মূল্য কম দিচ্ছিল, অবৈধ চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানো কম লাভজনক বলেও তিনি জানান।
রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবাহের প্রভাব সম্পর্কে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘প্রথমদিকে ব্যাংকিং খাত যখন তারল্য সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন এটি দেশের অর্থনীতির পক্ষে সহায়ক ছিল। তবে পরবর্তীতে আমদানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য মূল্যস্ফীতির প্রভাব তৈরি করতে শুরু করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই মাসে ৯ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ২বিলিয়ন ডলার।
গেলো বছরের ডিসেম্বরে রেমিটেন্স এসেছে ২ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। আগের মাস নভেম্বরে এসেছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার।
২০২১ সালের জুলাই অতীতের সব সময়ের চেয়ে বেশি ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১৮ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।
প্রবাসীরা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আগস্ট মাসে ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং অক্টোবর মাসে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন দেশে।