তরফ নিউজ ডেস্ক : নির্বাচন সামনে রেখে জোটের মেরুকরণে দেশের প্রায় অর্ধেক রাজনৈতিক দল যেখানে স্পষ্ট দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, সেখানে সংখ্যার পাল্লায় প্রধান দুই দলের মার্কার ভার দাঁড়িয়েছে সমানে সমান।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আর কোনো সংসদ নির্বাচনে দুই মার্কার ভিত্তিতে এতটা বিভক্তি দেখা যায়নি। নিজেদের নির্বাচনী প্রতীক তুলে রেখে বড় দলের পতাকাতলে শামিল হওয়া এমন ঢালাও নজিরও আর নেই।
জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের যে সুযোগ আইনে রয়েছে, তা কাজে লাগাতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার সুযোগ ছিল।
সেসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে নির্বাচন কমিশন যে তালিকা দিয়েছে, তাতে দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২২টিই নির্বাচন করতে চায় নৌকা অথবা শীষ প্রতীক নিয়ে।
এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের ১১টি দল ‘নৌকা’ প্রতীক এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ১১টি দল ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানিয়েছে।
বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী হলেও নিজেদের প্রতীক লাঙ্গল নিয়েই ভোট করবে। অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের সুযোগে তাদের এই প্রতীক চেয়েছে আরও দুটি দল। বাকি ১৪টি নিবন্ধিত দল নিজেদের প্রতীকেই ভরসা রাখছে।
কোন দল কোন মার্কায়
| দলের নিবন্ধন নম্বর |
দলের নাম ও প্রতীক |
যে প্রতীকে ভোট করতে ইচ্ছুক |
১
|
এলডিপি, ছাতা |
ধানের শীষ |
| ২ |
জেপি, বাইসাইকেল |
বাইসাইকেল ও নৌকা |
| ৩ |
সাম্যবাদী দল, চাকা |
নৌকা |
| ৪ |
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গামছা |
গামছা অথবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রতীক |
| ৫ |
সিপিবি, কাস্তে |
|
| ৬ |
আওয়ামী লীগ, নৌকা |
নৌকা |
| ৭ |
বিএনপি, ধানের শীষ |
ধানের শীষ |
| ৮ |
গণতন্ত্রী পার্টি, কবুতর |
নৌকা |
| ৯ |
ন্যাপ, কুঁড়েঘর |
নৌকা অথবা কুঁড়েঘর |
| ১০ |
ওয়ার্কার্স পার্টি, হাতুড়ী |
নৌকা |
| ১১ |
বিকল্পধারা, কুলা |
কুলা অথবা নৌকা |
| ১২ |
জাতীয় পার্টি, লাঙ্গল |
লাঙ্গল |
| ১৩ |
জাসদ, মশাল |
নৌকা |
| ১৫ |
জেএসডি, তারা |
ধানের শীষ অথবা তারা |
| ১৬ |
জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল |
|
| ১৭ |
বাসদ, মই |
নৌকা |
| ১৮ |
বিজেপি, গরুর গাড়ী |
গরুর গাড়ী অথবা ধানের শীষ |
| ১৯ |
তরীকত ফেডারেশন, ফুলেরমালা |
নৌকা |
| ২০ |
খেলাফত আন্দোলন, বটগাছ |
|
| ২১ |
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, হারিকেন |
|
| ২২ |
এনপিপি, আম |
আম |
| ২৩ |
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেজুরগাছ |
খেজুরগাছ অথবা ধানের শীষ |
| ২৪ |
গণফোরাম, ঊদীয়মান সূর্য |
ধানের শীষ |
| ২৫ |
গণফ্রন্ট, মাছ |
|
| ২৬ |
পিডিপি, বাঘ |
বাঘ |
| ২৭ |
বাংলাদেশ ন্যাপ, গাভী |
গাভী অথবা নৌকা |
| ২৮ |
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, কাঁঠাল |
কাঁঠাল অথবা জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী |
| ৩০ |
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, চেয়ার |
নৌকা অথবা চেয়ার |
| ৩১ |
কল্যাণ পার্টি, হাতঘড়ি |
ধানের শীষ অথবা হাতঘড়ি |
| ৩২ |
ইসলামী ঐক্যজোট, মিনার |
|
| ৩৩ |
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, রিক্সা |
লাঙ্গল |
| ৩৪ |
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাতপাখা |
|
| ৩৫ |
ইসলামী ফ্রন্ট, মোমবাতি |
মোমবাতি অথবা লাঙ্গল |
| ৩৬ |
জাগপা, হুক্কা |
হুক্কা অথবা ধানের শীষ |
| ৩৭ |
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কোদাল |
|
| ৩৮ |
খেলাফত মজলিশ, দেওয়াল ঘড়ি |
দেওয়াল ঘড়ি অথবা ধানের শীষ |
| ৪০ |
বিএমএল, হাত (পাঞ্জা) |
হাত (পাঞ্জা) অথবা ধানের শীষ |
| ৪১ |
মুক্তিজোট, ছড়ি |
সময় বাড়ানোর আবেদন |
| ৪২ |
বিএনএফ, টেলিভিশন |
সময় বাড়ানোর আবেদন |
ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান জানান, জোটভুক্ত হিসেবে অনিবন্ধিত দলের তালিকাও দিয়েছে অনেক দল। তবে ইসির শুধু নিবন্ধিত দলের বিষয়টি আমলে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। দলীয় ও জোটভুক্ত প্রার্থীকে সংরক্ষিত অভিন্ন প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দলের বাইরে পছন্দসই প্রতীক দিতে পারেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
জোটভুক্ত হয়ে প্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধান দলটির সম্মতিই মুখ্য বিবেচিত হবে বলে জানান তিনি।
| # নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটসঙ্গীরা মিলিয়ে মোট ১২টি দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়।
অধিকাংশ দলের ভোট বর্জনের ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জোটের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। আরেক জোট শরিক জাতীয় পার্টি অনেক নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে আলাদা ভোট করে।
# সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসন শেষে ২০০৮ সারের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৮টি দল। আওয়ামী লীগ এরশাদের জাতীয় পার্টিসহ চৌদ্দদলীয় মহাজোট গঠন করে, অন্যদিকে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীকে চারদলীয় জোট গঠন করে।
নিবন্ধিত দল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন মহাজোটের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকেই ভোটে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টি জোটে থাকলেও ভোট করে নিজেদের লাঙ্গল প্রতীকে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নিবন্ধিত দল বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ওই নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আরেক জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী ভোট করে নিজেদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায়।
# রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরুর পর এখন অনিবন্ধিত কোনো দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তবে নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোট বেঁধে তাদের মার্কা নিয়ে অনিবন্ধিত দলের প্রার্থীও ভোট করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনিবন্ধিত দলের ওই প্রার্থী কাগজে কলমে মনোনয়নদাতা নিবন্ধিত দলের প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হন।
# রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে জোটের পরিসর বাড়িয়ে ভোটের মাঠ চাঙ্গা রাখতেই বড় দলগুলো ছোট দলগুলোকে কাছে টানে। নিবন্ধন থাক বা না থাক, কর্মী-সমর্থক যত কমই হোক, জোটের রাজনীতির মূল কথা হল- দল ভারী দেখিয়ে ভোটারদের নজর কাড়া। |
প্রার্থী প্রত্যয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম চেয়ে চিঠি
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসনভিত্তিক চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থী প্রত্যয়নে দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবী ও নমুনা স্বাক্ষর চেয়ে নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি কর্মকর্তা হালিম খান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দলগুলোর মহাসচিবদের চিঠি পাঠিয়েছি। এটার জন্যে কোনো সময় উল্লেখ করিনি। আইন অনুযায়ী তফসিলে উল্লেখ করা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়ের আগে তা জানাতে হবে।”
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে। এর আগে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়, বাছাই ২ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে।
দলগুলোর সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক এবং তাদের সমমর্যাদার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যয়ন করে থাকেন বলে জানান আব্দুল হালিম খান।
তিনি বলেন, একই আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়ন কে পেলেন, তা নিয়ে কখনও কখনও বিপত্তি দেখা দেয়।
কোনো দলের একাধিক ব্যক্তি চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পত্র দেওয়ার নজিরও রয়েছে। বিশেষ করে, দল ভাঙনের পর এক অংশ একজনকে, আরেক অংশ অন্যজনকে চূড়ান্ত বলে দাবি করে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ায় জাসদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
“নির্বাচনী আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থী কে থাকবেন বা দলের একক প্রার্থিতা নিশ্চিত হতে দলীয় প্রত্যয়ন আবশ্যক। সেক্ষেত্রে যিনি দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার নাম, পদবী ও স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিষয়টি আমরা জানিয়ে দিচ্ছি,” বলেন এ কর্মকর্তা।
সূত্র : বিডিনিউজ২৪