বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ক্ষমতায় গেলে পাঁচ বছরে ২৫ কোটি গাছ লাগাবে বিএনপি: তারেক রহমান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার: সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্রদল নেতা হামিমের বিরুদ্ধে চলতি সপ্তাহেই ভোটের কর্মপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করবে ইসি জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম চুনারুঘাটে গৃহবধূ হত্যার অভিযোগ স্বামী পলাতক, দুই নারী আটক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তায় গেইট বসানোর অভিযোগ শেখ মুজিবুর রহমান জাতির জনক নন: নাহিদ ইসলাম বাহুবলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু সুনামগঞ্জে ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে দুই প্রাণহানি

হবিগঞ্জে ১৫ মাসে ১৩ হাজার মামলা নিষ্পত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : হবিগঞ্জ জেলার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১৫ মাসে রেকর্ড পরিমাণ ১৩ হাজার ১২৪টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিনের মামলার জট কমে এসেছে অনেকটা। ফলে বিচারপ্রার্থীদের অনেক দুর্ভোগ লাগব হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জে মূখ্য বিচারিক হাকিম হিাসেবে তানিয়া কামাল যোগদান করার পরই যখন জানতে পারেন হবিগঞ্জ জেলায় প্রায় ২০ হাজার মামলা চলমান রয়েছে। এর মাঝে ১০ বছরেরও বেশী সময় যাবৎ চলকে অনেক মামলা। তিনি যোগদান করার পর এ মামলা জট কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করলে দ্রুতই কমতে থাকে মামলার সংখ্যা । বিশেষ করে পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তি থেকে রেহাই পেয়েছেন।

মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে জে এম (জুডিসিয়াল মুন্সিখানা) সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হবিগঞ্জে মূখ্য বিচারিক হাকিম হিসেবে যোগদান করেন। এর পর ওই বছরের ১৪ নভেম্বর স্বক্রিয় হয় হবিগঞ্জে নব নির্মিত চীফ জুডিসিয়াল ভবন। তিনি যখন হবিগঞ্জে যোগদান করেন তখন বিচারাধীন মামলা ছিল ১৯ হাজার ৮৭৭টি। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত এখানে নতুন মামলা দায়ের করা হয় ১১ হাজার ৮৭৭টি। কিন্তু মূখ্য বিচারিক হাকিম তানিয়া কামাল এর নেতৃত্বে সকল বিচারকরা মিলে ওই সময়ে নিষ্পত্তি করেন ১৩ হাজার ১২৪টি মামলা। যা দায়েরের তুলনায় ১ হাজার ৩৭৭টি বেশী। নিষ্পত্তিকৃত মামলার মাঝে ১০ বছরের অধিক পুরনো ছিল ৯৬১টি এবং ৫ বছরের অধিক পুরনো ছিল ১ হাজার ২৫২টি। বর্তমানে এখানে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১৮ হাজার ৫০০টি।

সূত্রে আরও জানা যায়, পূর্বে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল সাক্ষী হাজির না হওয়া এবং স্বাক্ষ্য গ্রহণে বিলম্ভ। কিন্তু বর্তমানে স্বাক্ষীর জন্য যথাযথভাবে নোটিশ করায় সাক্ষ্য গ্রহণের হার অনেক বেড়েছে। উল্লেখিত সময়ের মাঝে সবগুলো বিচারিক আদালত রেকর্ড সংখ্যক ১২ হাজার ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। শুধু তাই নয় দিনের পর দিন জমে থাকা মামলার জব্দকৃত আলামতও এ সময়ে ধ্বংস করা হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ।

বিচারকদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে ধ্বংস করা হয় ৪ হাজার ৯২৫ কেজি গাঁজা, ৯ হাজার ২২০ লিটার চোলাই মদ, ২৬৯ বোতল ফেন্সিডিল ও ৩৫৬ বোতল বিদেশী মদ। বিক্রয়যোগ আলামত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে জমা করা হয়েছে ১২ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৯ টাকা। এ সময়ে নিষ্পত্তিকত মামলার নথি ধ্বংস করা হয়েছে ১ হাজার ১শ’। ১৭ সেপ্টেম্বর ধ্বংস করা হয়েছে আরও ১ হাজার ৮২৩টি নথি।

মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের জে এম শাখার দায়িত্বশীলরা জানান, আরও ৭ হাজার নথি ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান মূখ্য বিচারিক হাকিম তানিয়া কামাল নিয়মিত মাসিক পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স আয়োজন করছেন। তিনি বিভিন্ন থানাও পরিদর্শনে যান। ইতোমধ্যে তিনি ৫টি থানা পরিদর্শন করেন। থানায় ৮৬টি রেজিস্টার নিয়মিত হাললাগাদ করতে হয়। পরিদর্শনকালে তিনি দেখেছেন যথাযথভাবেই রেজিস্টার হালনাগাদ করা হচ্ছে। তবে থানাগুলোতে জব্দকৃত মামলার আলামত হিসেবে যে গাড়ী রাখা হয় সেই স্থানটি সুরক্ষিত না হওয়ায় অনেক মূল্যবান গাড়ী নষ্ট হচ্ছে। এতে করে এক পর্যায়ে গাড়ী মালিকরা তা আর নিতে চান না। আবার নিলামে বিক্রি করলেও ভলো দাম পাওয়া যায় না।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পীরেরগাঁও গ্রামের ছায়া আক্তার নামে এক মামলার বাদী জানান, তিনি দিনের পর দিন আদালতে এসে মামলার সাক্ষী সম্পন্ন করার চেষ্টা করলেও শুধু তারিখ পড়ে যেত। কিন্তু ৫ বছরের চেষ্টায় যে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেননি তা ৫ মাসেই এখন শেষ হয়েছে। এতে করে আর আমাকে আদালতে দৌড়াতে হবে না। দিনের পর দিন মামলার পিছনে দৌড়াতে গিয়ে অনেক সময় ও অর্থ অপচয় হয়েছে।

হবিগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী ও জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি এডভোকেট আবুল খায়ের বলেন, আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে মানুষকে অনেক ভোগান্তি থেকে রেহাই দেয়া সম্ভব। এটি প্রমাণ করেছেন মূখ্য বিচারিক হাকিম তানিয়া কামাল। নিজে বিচার ও প্রশাসনিক কাজে ব্যস্থ থাকার পরও তিনি সবদিকে নজর দেয়ায় এখানে শুধু মামলা জটই কমেনি, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমেছে। আর পুরনো জঞ্জাল অপসারণ করায় এখানে জটিলতা অনেক কমে আসবে।

হবিগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী ও সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, কেউ চাইলেই মামলা জট কমাতে পারবে না। এখানে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। কিন্তু মূখ্য বিচারিক হাকিম তানিয়া কামাল সবকিছু সমন্বয় করে এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে যেভাবে মামলার জট কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আর পুরনো নথি ধ্বংস করা আরও অনেক কঠিন কাজ। এগুলো অনেক যাছাই বাছাই করতে হয়। বিচারিক কাজে ব্যস্ত থাকার পরও এদিকেও নজর দেয়াটা অনেক কঠিন। এভাকে কাজ করলে বিচারিক কাজে অনেক শৃঙ্খলা চলে আসবে।

হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট নুরুজ্জামান বলেন, অল্প সময়ে এত মামলা নিষ্পত্তি করায় অনেকের ধারণা হতে পারে এখানে যথাযথ বিচার না করেই মামলা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তা সঠিক নয়। আন্তরিকভাবে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কমেছে মামলা। অনেকেই ধারণা করতে পারেন এভাবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হলে কেউ মামলা করতে আগ্রহী হবেন না। এটিও সঠিক নয়। বরং মামলার দীর্ঘসূত্রিতার ভয়ে অনেকেই নিপীড়িত এবং নিগৃহীত হওয়ার পরও আদালতে আসেন না বিচারের জন্য। তারা নীরবে অন্যায় মেনে নেন। এখন তারাও আগ্রহী হবেন বিচার প্রার্থনার জন্য। এর মাধ্যমে বরং ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।

হবিগঞ্জের তরুণ আইনজীবী ও জেলা পরিষদ সদস্য এডভোকেট সুলতান মাহমুদ বলেন, সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার মাঝে সবছেয়ে বেশী মামলা হবিগঞ্জ জেলায়। অন্য তিন জেলায় যতগুলো মামলা রয়েছে তার প্রায় সমান মামলা আছে এক হবিগঞ্জ জেলায়। এখানে অপরাধের ধরণ ও বহুমাত্রিক। আর বিচারকরা বিচারিক কাজের বাহিরে প্রায়ই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ ও ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করতে হয়। এত কাজের চাপ থাকার পরও এভাবে মামলা নিষ্পত্তি ও আলামত বিনষ্ট করার ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সরকার মানুষের জন্য দ্রুত ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়নে এ কার্যক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি।

আদালত সূত্র জানায়, বর্তমানে হবিগঞ্জে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯টি বিচারকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৮জন। এর মাঝে মূখ্য বিচারিক হাকিমকে বিচারের বাহিরেও ব্যস্ত থাকতে হয় প্রশাসনিকসহ অন্যান্য কাজে। আর একজন বিচারক আছেন আজমিরীগঞ্জ চৌকি আদালতে। তার আদালতে মাত্র ১১৪টি মামলা পেন্ডিং আছে। কিন্তু চৌকি আদালতের বিচারক এর অন্য কাজের সুযোগ না থাকায় তার পক্ষে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে ন।

বিচার সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেন, বর্তমানে থানা ভিত্তিক আদালত গঠন ও বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু থানা ভিত্তিক না করে যদি মামলা ভিত্তিক বিচারক নিয়োগ করা হত তাহলে আরও বেশী মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হত এবং জনগণও আরও দ্রুত বিচার পেত।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com