রবিবার, ২১ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নিহত ৩ কলম্বিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা বাহুবলে স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণের জন্য জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাহুবলে দুই মাস ধরে নিখোঁজ রবিউলের সন্ধান চায় পরিবার যে কারণে ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার হুমকি দেয় সোহাগ ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার হুমকিদাতা গ্রেপ্তার পিএসসির প্রশ্নফাঁস: দায় স্বীকার করে ৭ জনের জবানবন্দি, ১০ জন কারাগারে দেশের সম্পদ বেচে মুজিবের মেয়ে ক্ষমতায় আসে না: প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার হুমকি, প্রতিবাদে বাহুবলে মানববন্ধন

কৃষকলীগ নেতার কবলে থাকা ১৪ একর ভূমি উদ্ধার

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজার দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা সরকারের খাস ভূমির ১৩ একর জায়গা উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (২জানুয়ারি) বানিয়াচং উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান খান দখল করে রাখা ভূমিতে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন স্থাপনা বন্ধের নির্দেশনা প্রদান করে সীমান চিহ্নিত করে দেন।

সরকারি খাস ভূমি দখল প্রসঙ্গে গত ২৫ নভেম্বর মক্রমপুর ইউনিয়নের কচুয়ারআব্দা গ্রামের এলাকাবাসীর পক্ষে জ্যোতিময় দাস নামে এক ব্যক্তি মাননীয় ভূমি মন্ত্রীর বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করে রেকর্ডপত্রাদি আলোকে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় গ্রহন করতে গত ৩ ডিসেম্বর ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ (হবিগঞ্জ) ইয়াছিন আরাফাত রানা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবারে পত্রাদি প্রেরণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করেন।

জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত সুলতানপুর মৌজার এস,এ,জে,এল নং-২০০, আর,এস,জে,এল নং-২০৫, খতিয়ান নং-১ এর দাগ নং ৯১, ৯৩ ও ১৩৩ এর মোট ১৪ একর ৪৫ শতক ভূমি বিগত ১৯৮৮ সনে এলাকার ভূমিহীনদের নামে লীজ প্রদান করে উপজেলা ভূমি অফিস। কিন্তু লীজ দেয়ার পর উপরোক্ত ভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করে পতিত ই ফেরে রাখে ভূমিহীনরা। পরে ২০১০ সালে এলাকাবাসী ও ভূমিহীনদের মধ্যে এই ভূমি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে শফিক মেম্বার নামে এক এলাকাবাসী নিহত হয়। ঘটনায় আসামি করা হয় উক্ত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রেজাকেও। হত্যার ঘটনার বিষয়টি পরবর্তীতে সমাধান হলে এলাকার নিরীহ ভূমিহীনদের নানা প্রলোভন, ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে পুরো ভূমিসহ কাগজপত্র নিয়ে নেন হুমায়ুন কবীর রেজা।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার ওই ভূমিতে গিয়ে দেখা যায়, হুমায়ুন কবীর রেজার ছোট ভাই মরহুম সামায়ুন কবীরের নামে “সামায়ুন কবীর হাফিজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন তিনি। পাশাপাশি এই মাদ্রাসার পিছনে এতিমখানার জন্য আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেন হুমায়ুন কবীর রেজা। মাদ্রাসার দক্ষিণ দিকে পুকুরের মধ্যে মাছচাষ ও পুকুরের পাড়ে রোপন করা নানা জাতের গাছ বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নিজের পকেটস্থ করছেন। আজ পর্যন্ত সরকারের কোষাগারে একটি টাকাও জমা দেননি হুমায়ুন কবীর রেজা। ফলে সরকার হারিয়েছে লাখলাখ টাকার রাজস্ব। অন্যদিকে নির্মাণাধীন মাদ্রাসার পিছন থেকে হাজার হাজার ফুট মাটি উত্তোলন করে মাদ্রাসার জন্য তুলে রেখেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান সরকারের খাস ভূমি মাপঝোঁক করে ওই স্থাপনা থেকে নির্মাণাধীন এতিমখানা, মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য আরেকটি নতুন নির্মাণাধীন ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনার কাজ বন্ধ রাখার জন্য জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজ কে নির্দেশনা দিয়ে আসেন। পাশাপাশি তিন দিনের মধ্যে সরকারি ভূমি থেকে সকল স্থাপনা নিজ দায়িত্বে সরানোর জন্যও মৌখিকভাবে জানিয়েদেন। অন্যথায় এসব স্থাপনা সরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে একই ভূমিতে নির্মাণাধীন দুটি ঘরের মালিক যথাক্রমে আব্দুল কাইয়ুম ও আব্দুর নুরকে তাদের ঘর সরানো জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই ভূমি এখনো ভূমিহীনদের নামেই আছে। এলাকাবাসী হিসেবে আমি শুধু জনস্বার্থে এতিমখানা ও মাদ্রাসা করে দিয়েছি। সরকারি কোনো ভূমি আমি দখল করে রাখিনি। এ সব দেখাশুনা করি আমি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকারের সাথে। তিনি জানান, সরকারি কোনো ভূমিতে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেনা। সরকার যদি চায় সেট ভিন্নকথা। প্রকৃত লীজধারীরা যদি ভূমিতে কোনো কিছু না করতে আগ্রহ হয় তাহলে তার লীজ বাতিল করে দেয়া হবে। আর লীজ হস্তান্তর করার কোনো নিয়ম নেই।

সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান খান জানান, বর্তমানে যিনি এই ভূমিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন বা করার চেষ্টা করছেন সেটা সম্পুর্ন অবৈধ। কারণ সরকার তাকে লীজ দেয়নি। সরকারের এই খাস ভূমিতে আশ্রয়ন প্রকল্প বা গুচ্ছ গ্রামের জন্য উপর মহলে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। বিষয়টি যেহেতু অনেক বড়ো জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মতামত নিয়ে যা করার সেটাই করা হবে। দখলকৃত ভূমি উদ্ধার কাজে সহায়তা করেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আমিনুর রহমান, চেইনম্যান নুরুল আমিন, খাগাউড়া ইউনিয়নের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার আচার্য্য।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com