বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ত্রাণের তালিকায় শাশুড়ি-শ্যালকসহ কোটিপতি ব্যবসায়ী, তদন্ত কমিটি গঠন

বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন লিয়াকত।

বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে হবিগঞ্জের বাহুবলের মিরপুর ইউনিয়নে অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত ত্রাণ সামগ্রী অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ না করে নানা কৌশলে নিজেই আত্মসাতের পায়তারা করেন ইউপি চেয়ারম্যান। ত্রাণ বঞ্চিত অসহায় মানুষ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।

এ নিয়ে ইউপি চেয়াম্যানের শাশুড়ি-শ্যালকসহ কোটিপতি ব্যবসায়ী ত্রাণের তালিকায় শিরোনাম সহ বিভিন্ন শিরোনামে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলো প্রশাসনের নজরে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা মহিলা কর্মকর্তা কে নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা তালুকদার এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, ত্রাণ বিতরণের তালিকায় এলাকার কোটিপতি থেকে শুরু করে জায়গা দিয়েছেন নিজের পরিবারের সদস্যদের থেকে শুরু করে নিকটাত্মীয়দের। উক্ত তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৭ নং ক্রমিকে মিরপুর বাজারের বিলাশ ফ্যাশনের মালিক ও জয়পুর ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরাধন, ১১নং ক্রমিকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে মিরপুর বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কাশফুল মিষ্টি দোকানের মালিক যুবলীগ নেতা এমরানকে, ৬ নং ক্রমিকে মিষ্টি ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ, ১৪ নং ক্রমিকে শিল্পপতি মোগল কার্টুন ফ্যাক্টরীর মালিক ময়না মিয়া, ৭৮ নং ক্রমিকে পিয়ারা খাতুন চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিনের শাশুড়ি, ২ নং ও ৬২ নং ক্রমিকে রিপন মিয়া তার শ্যালক, ৬৯ নং ক্রমিকে সমন্ধিকের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, ৭৯ নং ক্রমিকে শ্যালকের ছেলে হৃদয়ের নাম রয়েছে।

চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিনের ত্রাণ বিতরণের এক কেন্দ্রিক কার্যক্রমে হতাশ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেক ইউপি মেম্বারদের। গত ২৩ এপ্রিল শামীম আহমেদ নামে ২নং ওয়ার্ড সদস্য তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেন, ‘‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের এই অস্থির সময়ে ছোটবড় ৪ টি গ্রামের মেম্বার হিসাবে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৫ জনের নাম পেয়েছি। প্রতিটি নামে দশ কেজি করে চাল। কিন্তু আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রায় ৪’শ ৫০ জনকে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি’’।

সিদ্দিকুর রহমান মাসুম তার ফেইসবুক আইডি থেকে লিখেন, ‘‘মিরপুর ইউনিয়নে ৭ দফায় ত্রাণ বিতরণের তালিকায় রয়েছে শিল্পপতিদের নাম, রয়েছে জনপ্রতিনিধির নাম, রয়েছে ছেলে স্ত্রী শ্বাশুড়ির নামও। পুরো ইউনিয়নের সব গ্রামের নামের লোকদের তালিকায় নাম না থাকলেও তালিকায় রয়েছে পার্শ্ববর্তী ভাদেশ্বর ইউনিয়নের বাসিন্দার নামও। নামের নিচে পিতার নাম, স্বামীর নাম, গ্রামের নামেও করা হয়েছে ঘষামাজা। বাড়ি ভাদেশ্বর হলেও দেখানো হয়েছে মিরপুর বাজার, রয়েছে সরকারী চাকুরীজীবির পিতার নামও। রয়েছে স্বামী স্ত্রীর নামও। তালিকায় নাম রয়েছে কিন্তু ত্রাণ পাননি। মিরপুর বাজারের মাত্র ১৮ ব্যবসায়ীর নামের তালিকা পাওয়া গেছে।

অপরদিকে ত্রানের যে তালিকাটি প্রকাশ হয়েছে এ বিষয়ে দেখা যায়, মূলত ইউপি চেয়ারম্যান ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই কাল্পনিক ও গায়েবি তালিকা তৈরি করছেন। তালিকায় যাদের ঠিকানা মিরপুর বাজার দেখিয়েছেন এর মাঝে অনেকের কোন অস্থিত্তই নেই। আবার অনেকের গ্রামের ঠিকানা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার ও ৮ নং ওয়ার্ডের লাকুরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম, তার ছেলে জনি, স্ত্রী রাহেলা খাতুন ও তার বড় ভাইয়ের নাম উল্লেখ রয়েছে তালিকায়।

কবির চৌধুরী, গ্রাম লাকুরীপাড়া নামের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। এ নামের কাউকে গ্রামের লোকজন চিনেন না। এতে প্রতীয়মান হয় নাম ভুয়া।

তালিকায় নাম আছে অথচ ত্রাণ পাননি পশ্চিম জয়পুর গ্রামের দৈয়া মিয়ার ছেলে মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী ফরিদ মিয়া, তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চেয়ারম্যান আমার নাম লিখেছে কিন্তু ত্রাণ দেয়নি। ত্রাণের তালিকায় তার নাম আসায় লজ্জায় তিনি আতœহত্যার কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষে ভাববে আমি ত্রাণ নিয়ে খাইছি, এগুলি তো পাবে আমার চেয়ে গরীব মানুষরা। এখন বলেন, মানুষের সামনে কেমনে মুখ দেখাই।

রাজেন্দ্রপুর গ্রামের সুমন নামের এক ব্যাক্তি বলেন, তালিকায় আমার নাম বাবার নাম ঠিকই দিছে, গ্রামের নাম দিছে রাজেন্দ্রপুর। পরে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেছি, সে বলল ভুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি দেখেছি, অনেক ব্যবসায়ীর নাম ভূয়া, খোঁজ নিয়ে অনেককেই পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘‘আমি একজন চেয়ারম্যান, আপনার মত সাংবাদিক আমিও হতে পারি। পারলে আমার জায়গায় এসে নির্বাচন করে দেখান। ত্রাণ আমার প্রাপ্য, আমি যাকে খুশি দিতে পারি। এটা আমার ব্যাক্তিগত বিষয়’’।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com