বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন
বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের বাহুবলে মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন লিয়াকতের বিরুদ্ধে ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। শনিবার দুপুরে ফরিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগটি দায়ের করেন। অভিযোগকারী ব্যক্তি উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জয়পুর গ্রামের ইমার উদ্দিনের ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী পশ্চিম জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ মিয়া জানতে পারেন ত্রাণের তালিকায় তার নাম রয়েছে, কিন্ত বাস্তবে তিনি কোন রকম সরকারি ত্রাণ সামগ্রী পাননি। তিনি অভিযোগপত্রে আরও জানান, আমার মতো মিরপুর বাজারের আরও অনেক ব্যবসায়ীসহ এলাকার অনেক মানুষের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্তি করে জনবান্ধব সরকারের দেওয়া নির্ধারিত ত্রাণ সামগ্রী অসহায় গরীবদের মাঝে বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন।
জানা যায়, ত্রাণ বিতরণের তালিকায় এলাকার কোটিপতি থেকে শুরু করে জায়গা দিয়েছেন নিজের পরিবারের সদস্যদের থেকে শুরু করে নিকটাত্মীয়, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ও ইউনিয়নের বাহিরের লোকজনকে। ইউপি’র ওয়েবসাইডে প্রকাশিত তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৭ নং ক্রমিকে মিরপুর বাজারের বিলাশ ফ্যাশনের মালিক ও জয়পুর ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরাধন, ১১নং ক্রমিকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে মিরপুর বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কাশফুল মিষ্টি দোকানের মালিক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এমরানকে, ৬ নং ক্রমিকে মিষ্টি ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ, ১৪ নং ক্রমিকে শিল্পপতি মোগল কার্টুন ফ্যাক্টরীর মালিক ময়না মিয়া, ৭৮ নং ক্রমিকে পিয়ারা খাতুন চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিনের শাশুড়ি, ২ নং ও ৬২ নং ক্রমিকে রিপন মিয়া তার শ্যালক, ৬৯ নং ক্রমিকে সমন্ধিকের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, ৭৯ নং ক্রমিকে শ্যালকের ছেলে হৃদয়ের নাম রয়েছে।
ওয়েবসাইডে প্রকাশিত তালিকা বিশ্লেষন করে দেখা যায়, সাত দফায় তালিকায় রয়েছে শিল্পপতিদের নাম, জনপ্রতিনিধির নাম, রয়েছে ছেলে স্ত্রী শ্বাশুড়ির নামও। পুরো ইউনিয়নের সব গ্রামের নামের লোকদের তালিকায় নাম না থাকলেও তালিকায় রয়েছে পার্শ্ববর্তী ভাদেশ্বর ইউনিয়নের বাসিন্দার নামও। নামের নিচে পিতার নাম, স্বামীর নাম, গ্রামের নামেও করা হয়েছে ঘষামাজা। বাড়ি ভাদেশ্বর হলেও দেখানো হয়েছে মিরপুর বাজার, রয়েছে সরকারী চাকুরীজীবির পিতার নামও। রয়েছে স্বামী স্ত্রীর নামও। তালিকায় নাম রয়েছে কিন্তু ত্রাণ পাননি। মিরপুর বাজারের মাত্র ১৮ ব্যবসায়ীর নামের তালিকা পাওয়া গেছে। ইউপি’র দফাদার ও ৮ নং ওয়ার্ডের লাকুরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম, তার ছেলে জনি, স্ত্রী রাহেলা খাতুন ও তার বড় ভাইয়ের নাম উল্লেখ রয়েছে তালিকায়।
কবির চৌধুরী, গ্রাম লাকুরীপাড়া নামের কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। এ নামের কাউকে গ্রামের লোকজন চিনেন না। এতে প্রতীয়মান হয় নাম ভুয়া।
তালিকায় নাম আছে অথচ ত্রাণ পাননি পশ্চিম জয়পুর গ্রামের দৈয়া মিয়ার ছেলে মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী ফরিদ মিয়া, তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চেয়ারম্যান আমার নাম লিখেছে কিন্তু ত্রাণ দেয়নি। ত্রাণের তালিকায় তার নাম আসায় লজ্জায় তিনি আতœহত্যার কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষে ভাববে আমি ত্রাণ নিয়ে খাইছি, এগুলি তো পাবে আমার চেয়ে গরীব মানুষরা। এখন বলেন, মানুষের সামনে কেমনে মুখ দেখাই।
রাজেন্দ্রপুর গ্রামের সুমন নামের এক ব্যাক্তি বলেন, তালিকায় আমার নাম বাবার নাম ঠিকই দিছে, গ্রামের নাম দিছে রাজেন্দ্রপুর। পরে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেছি, সে বলল ভুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি দেখেছি, অনেক ব্যবসায়ীর নাম ভূয়া, খোঁজ নিয়ে অনেককেই পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এর সাথে মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে না পারায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।