বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : চারটি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকেলে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ পরবর্তী সার্বিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রাথমিক হিসাব আমরা পেয়েছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও কৃষি মন্ত্রণালয় আমদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়েছে। অন্য যারা আছেন রিপোর্ট দিয়েছেন তারা তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেয়নি।’
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ২৬টি জেলায় আঘাত হেনেছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে ডি-ফরমে তথ্য আসবে। প্রায় ৭ দিন সময় লাগবে। এরপর এটা জানাতে পারব।’
বুধবার (২০ মে) বিকেলে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানার পর স্থলভাগে উঠে আসে। সন্ধ্যারাত থেকে বাংলাদেশের উপকূলেও শুরু হয় আম্ফানের তাণ্ডব। সারারাত এটি ঘূর্ণিঝড় রূপে থেকেই দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়েছে। সারারাত তাণ্ডব চালানোর পর বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকাল সাড়ে ৭টার পর শক্তি ক্ষয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। ওই সময় স্থল নিম্নচাপ হিসেবে রাজশাহীতে অবস্থান করছিল আম্ফান। সকালেই মোংলা, পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।
মারা গেছেন ১০ জন
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে মোট ১০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে পটুয়াখালীতে শাহ আলম নামের একজন কৃষক মারা গেছেন। যশোরে সায়রা বেগম নামে একজন নারী, ডলি খাতুন নামের একজন গৃহিণী ও রাবেয়া খাতুন নামের একজন ছাত্রী গাছ চাপা পড়ে মারা গেছেন। পটুয়াখালীতে রাশেদ নামে ৫ বছরের এক শিশু গাছ চাপা পড়ে মারা গেছে। ভোলাতে সিদ্দিক নামের একজন কৃষক গাছ চাপা পড়ে মারা গেছেন। পিরোজপুরে শাহজাহান মোল্লা নামের একজন কৃষক গাছ চাপা পড়ে মারা গেছেন। সাতক্ষীরায় পরিমন বিবি নামের একজন নারীও গাছ চাপা পড়ে মারা গেছেন। চুয়াডাঙ্গায় আরও ২ জন মারা গেছেন।’
অন্যান্য ক্ষতি
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী জানতে পেরেছি, প্রায় এক হাজার ১০০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৬টি জেলার মধ্যে এই রাস্তা রয়েছে। ২০০টি ব্রিজ-কালভার্ট এবং ২৩৩টি স্থানীয় সরকার কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো বেশিরভাগ বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা এলাকায়। এছাড়া অনেকগুলো টিউবয়েলের ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বরিশাল ও খুলনা বিভাগে পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আম, লিচু, মুগডালের ক্ষতি হয়েছে।’
‘প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আমের ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জে আমের ক্ষতি হয়েছে। ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেব যে আমগুলোর ক্ষতি হয়েছে সেগুলো ত্রাণের টাকায় কিনে যাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি তাদের মধ্যে এগুলো বিতরণ করতে হবে। এতে আম চাষিরা লাভবান হবেন, আমগুলোর সদ্ব্যবহার হবে।’
‘পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তাদের ১৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮৪টি জায়গায় বাঁধের ফাটল ধরেছে বা ভেঙেছে। সেগুলোর জন্য তাদের ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। আগামীকাল থেকে এই বাঁধগুলোর সংস্কার কাজ চলবে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছে বিদ্যুৎসরবরাহ না থাকায় অনেক জায়গায় তাদের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন আছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
এনামুর রহমান বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এবার যেহেতু আমরা পশুদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম এজন্য গবাদিপশুর খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু মৎস্য চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালীতে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ৫০০ চিংড়ির ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।’
শিক্ষাখাতের খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সামান্য ক্ষতি হয়েছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঠিক করার জন্য ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত প্রতিটি জেলায় ৫০০ বান্ডিল করে টিন ও ১৫ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণের জন্য চাল ও নগদ টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের মজুত পর্যাপ্ত আছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
আগামীকাল সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালীসহ ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী