বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: মহামারি করোনা দূর্যোগের শুরু থেকেই স্বাস্থ্যখাতের নানা দুর্নীতির চিত্র উঠে আসছে গণমাধ্যমে। পিপিই কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে কিট বাণিজ্য– সব জায়গা থেকে দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত বিল যাচাই-বাছাই ও তদন্তের পর পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) হিসাব বিভাগের বিল সংক্রান্ত কাজকর্ম শেষ করার দিন ছিল। করোনা সংকটে স্বাস্থ্যখাতে বিতর্কিত জিনিসপত্র সরবরাহের বিল যাচাই-বাছাই ও তদন্ত করে দেখার জন্য স্বাস্থ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, করোনা সংকটে স্বাস্থ্যখাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
এর মধ্যে রয়েছে–
পিপিই এবং মাস্ক কেলেঙ্কারি: যে সমস্ত মাস্ক এবং পিপিই সরবরাহ করা হয়েছিল, তা ছিল নিম্নমানের। এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছিল। আসল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ না করে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত এপ্রিলেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সুনির্দিষ্টভাবে বলেন, যারা এইগুলো সরবরাহ করেছে তারা সঠিকভাবে সরবরাহ করেছে কি-না তা খতিয়ে দেখার জন্য।
কিন্তু এরপরেও বিভিন্ন জায়গায় নিম্নমানের মাস্ক এবং পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, যারা এই ধরণের বিতর্কিত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই এবং মাস্ক) সরবরাহ করেছে তাদেরকে যেন বিল পরিশোধ না করা হয় এবং এই ব্যাপারে যেন সুষ্ঠ তদন্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় এই বিলগুলো এখনো পরিশোধিত হয়নি।
আরটি পিসিআর মেশিন কেলেঙ্কারি: করোনা সংকটের সময় দ্বিতীয় যে দুর্নীতির অভিযোগটি আলোচিত হয়েছে তা হলো আরটি পিসিআর মেশিন কেলেঙ্কারি। যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হলো তখন মাত্র একটি মেশিন দিয়ে কাজ হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী যখন সব জেলায় করোনার নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দিলেন, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০০৯ এর মেশিন ক্রয় করলো।
এই মেশিনগুলো কম কার্যকর, কম নমুনা পরীক্ষা করা যায় এবং এখন এই মেশিনগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিটের সংকট দেখা গেছে। এই বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এসেছে এবং এই বিলগুলো আটকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জিকেজি কেলেঙ্কারি: করোনা সংকটের সময় বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল সরকার এবং সেই কাজে সহযোগিতা করার জন্য ভুঁইফোড় এক প্রতিষ্ঠান জিকেজিকে অনেক কিছু দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই বিষয়গুলো নিয়েও এখন তদন্ত হচ্ছে। জিকেজিকে যে সমস্ত জিনিসপত্র সরবরাহ করতে দেওয়া হয়েছে, সেই সমস্ত জিনিসের বিল আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এডিবি এবং বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে দুর্নীতি এডিবি এবং বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের প্রধান ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা ডা. ইকবাল কবির। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বেশি দাম দিয়ে পিপিই এবং মাস্ক কিনেছেন। এখানেও ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। যদিও এটা এডিবি এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের টাকা, তবে এখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আছে। এমন বাস্তবতায় এই সংক্রান্ত জিনিসপত্র যারা সরবরাহ করেছে সেই সরবরাহকারী বা ঠিকাদারদেরও বিল দেওয়া হচ্ছে না।
করোনায় যেসব ঠিকাদারদের দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করিয়েছে, তাদের একটি সিন্ডিকেট আছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত এই সিন্ডিকেটের কেউই বিল পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হিসাব রক্ষণ বিভাগ।