বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

রিমান্ডে রাজি হলেও আদালতে ভোল পাল্টালেন বাবুল

তরফ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামে আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় তার স্বামী, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার পাঁচ দিনের রিমান্ডে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তিনি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হলেও শেষ পর্যন্ত ভোল পাল্টিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টার নাটকীয়তার পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

সোমবার সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে হাজির করা হয় বাবুল আক্তারকে। স্ত্রী মিতু হত্যায় তিনি দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেবেন বলে আদালতকে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তাকে নেয়া হয় বিচারকের খাস কামরায়। তবে সেখানে গিযে ভোল পাল্টে ফেলেন বাবুল আক্তার।

জবানবন্দি নিয়ে গড়িমসি করতে থাকেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। এভাবে তিন ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর বাবুল আক্তার আদালতকে জানান, তিনি জবানবন্দি দেবেন না। এরপর আদালত সিদ্ধান্ত বদলের জন্য তাকে আরও এক ঘণ্টা সময় দেন। তবে শেষ পর্যন্ত জবানবন্দি না দেয়ার ব্যাপারে অনড় থাকেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার কাজী সাহাব উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বাবুলকে আজ আদালতে নেয়া হলেও তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। চার ঘণ্টারও অধিক সময় তিনি ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের খাসকামরায় ছিলেন। কিন্তু জবানবন্দি দেননি। পরে আদালতে তাকে কারাগারে পাঠান।’

এদিকে বাবুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি। বাবুল চার ঘণ্টা ভেতরে ছিলেন। তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন কি না, তা আমি জানি না। আজ নতুন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। তিনি যদি জবানবন্দি দিয়ে না থাকেন, তাহলে আমরা পরবর্তী সময়ে তার জামিনের আবেদন করব।’

পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রথম তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদে একরকম নিরুত্তরই ছিলেন বাবুল আক্তার। পরে কিছু কথা বলেছেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচলিত বোধ করছেন তিনি। তাদের দাবি, রিমান্ডের শেষ দিকে বাবুল আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। ঘাতক মুছার সঙ্গে তার ‍চুক্তির কথাও তিনি স্বীকার করেছেন। এমনকি তার দেয়া তিন লাখ টাকার মধ্যে দেড় লাখ টাকা দিয়ে মুছা পিস্তল কিনেন বলেও জানান তিনি।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত হল্যান্ডের নাগরিক গায়িত্রীর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্কের কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে মিতুকে হত্যা করেছেন, সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে এ ব্যাপারে বারবার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তিনি ভুল তথ্য দেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি এলাকায় খুন হন মাহমুদ খাতুন মিতু। ঘটনার পরপরই তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরপর ভিডিও ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেন।

চলতি মাসে বাবুল আক্তারের ব্যবসায়িক সহযোগী সাইফুল ও মামুন নামে দুজন আদালতের জবানবন্দিতে জানান, বাবুল আক্তার স্ত্রীকে হত্যার জন্য তিন লাখ টাকা লেনদেন করেছেন। এরপর ১১ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রামে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে মিতু হত্যার ঘটনায় তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। এরপর বাবুল আক্তারসহ আটজনের বিরুদ্ধে ১২ মে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেই মামলায় বাবুলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com