বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ অপরাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : ২০০৬ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মুশফিক, সাকিব ও তামিমের সাথে অলরাউন্ডার হিসাবে যিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তার নাম সিরাজুল্লাহ খাদেম নিপু। দুর্দান্ত বাম হাতি পেস বোলার। সাথে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যাপক চাহিদা। জাতীয় দলের আশপাশে থাকা এই ক্রিকেটার চুক্তিবদ্ধ ছিলেন বিসিবিরও সাথে। কিন্তু একটি ইনজুরির কারণে থমকে যায় হবিগঞ্জ থেকে বেড়ে উঠা এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার।
গ্রামের মাঠে মারুতি বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বাম চোখে আঘাতে সবকিছু থেমে যায়। বিসিবি থেকে চিকিৎসার যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশায় ক্রিকেট ছেড়ে জীবিকার তাগিদে এক সময় দেশ ত্যাগ করে আশ্রয় নেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশ পর্তুগালে। কাজের ফাকে ফাকে ক্রিকেট খেলে এখন তিনি পর্তুগাল জাতীয় দলেরও খেলোয়াড়। এক সময় তার সতীর্থ মুশফিক, সাকিব ও তামিমের ক্যারিয়ারের অর্জন যেখানে আকাশ ছোঁয়া সেখানে একই পর্যায়ের খেলোয়াড় হয়েও এখন তিনি ক্রিকেট খেলতে পারার আনন্দেই তৃপ্তি খুঁজে পান।
সিরাজুল্লাহ খাদেম নিপু বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) পর্তুগালের আলবারগারিয়াতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। মাল্টার বিপক্ষে পর্তুগাল জয়লাভ করে ৬ উইকেটে। নিপু পর্তুগালের পক্ষে ৪ ওভারে ২৮ রানে নেন সর্বোচ্চ ২টি উইকেট। আজ শনিবার নিপুর পর্তুগাল মুখোমুখি হবে জিব্রালটার।
নিপু একজন বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং মিডিয়ার পেস বোলার হিসাবে দেশের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন। দেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হতো। বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দলের পক্ষে অনেক দেশ সফর করেন। বয়স ভিত্তিক দলে খেলার সময়ই অসাধারণ নৈপুণ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান প্রাদেশিক প্রতিযোগিতা ডারউইন প্রিমিয়ার লীগে ডামরিন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলার সুযোগ পেয়ে নিপু তার জাত ছিনিয়েছিলেন। একটি ম্যাচে পালমারস্টন ক্রিকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে ৮৮ রান করেন এবং ৬টি উইকেট নেন।
মিডিয়ায় নিপু সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদের মূল্যায়ন ছিল, তিনি একজন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার ছিলেন। একটি ম্যাচের গতি পরিবর্তন করার স্বাভাবিক ক্ষমতা ছিল।
বাংলাদেশের হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াড-এর সাবেক কোচ শন উইলিয়ামস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, নিপু হবে বাংলাদেশের জাতীয় দলের পরবর্তী তারকা অলরাউন্ডার। উইলিয়ামসই এই তরুণকে ২০০৭ সালে ডারউইন ক্লাবের হয়ে খেলতে পাঠান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মোহামেডানের মতো দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন নিপু। সিলেট বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও অভিষেক হয় অল্প বয়সে। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলের অটোমেটিক চয়েস ছিলেন নিপু।
২০০৯ সালে ঢাকা লিগের জন্য হবিগঞ্জে নিজেকে প্রস্তুত করার সময় বলের আঘাতে চোখে আঘাত আনলে সবকিছু শেষ হয়ে যায়। এর পর অনেক চেষ্টা আর চিকিৎসায়ও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিসিবির সহযোগিতা পেলে হয়ত পুরোপুরি নিজেকে সুস্থ করতে পারতেন বলে মনে করেন নিপু। বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া এবং সতীর্থ সাকিব, তামিম আর মুশিফিকের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া আর নিজের পিছিয়ে পড়া নিয়ে হতাশ হলেও এখন পর্তুগালের হয়ে সফলতা অর্জন করাই তার লক্ষ্য বলে জানান ৩৩ বছর বয়সী নিপু।