রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ বলেছেন, তারেক রহমান জাতির সামনে যে ৩১ দফা দিয়েছেন, সেই ৩১ দফাই হচ্ছে জাতির মুক্তির রক্ষাকবজ। তারেক রহমান অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। আজ থেকে দুই বছর আগেই জাতির সামনে সেটি দিয়েছেন। আজ সংস্কার হচ্ছে, মিটিং হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে-ঘুরে ফিরে আজকের এই সংস্কার কমিশন সেটাই দিচ্ছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জিকে গউছ বলেন, এই পুলিশ এক বছর আগেও কী করেছে, সেটা যেন আমরা ভুলে না যাই। এই পুলিশ এককভাবে আমাদের জন্য হুমকি ছিল না। পুরো প্রশাসনকে হাসিনা আমাদের মুখোমুখি করেছে। আমি বারবার বলতাম, পুলিশ ছাড়া আওয়ামী লীগ আমাদের সামনে পাঁচ মিনিটও টিকতে পারবে না। প্রমাণ করেছি আমরা, হাসিনা পালিয়েছে ৫ তারিখে। ৩ তারিখে আমরা হবিগঞ্জকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিলাম। থানা পুলিশ ৩ তারিখ রাতেই থানা আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল। এটা ইতিহাস।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে হলে জনগণের ভালোবাসা লাগবে। জনগণের ভোট ছাড়া এমপি হওয়া যাবে না, জনগণের প্রতিনিধি হওয়া যাবে না। একজন পাঁচজনের ভোট দেবেন, মৃত মানুষের ভোট, বিদেশে থাকা মানুষের ভোট দেবেন-এই দিন বাংলাদেশে আর ফিরে আসবে না। আমাদের মানুষ রক্ত দিয়ে ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে দেয়াল সৃষ্টি করেছে, সেই দেয়াল আর কোনো স্বৈরাচার কোনোদিন ভাঙতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
জিকে গউছ বলেন, দলে যদি কেউ আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টা করেন, এটা গর্হিত অপরাধ, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এটা খেয়াল রেখে দলের কমিটি বানাতে হবে। এটা দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ। কোনো আওয়ামী লীগ আত্মীয়তার ছলে বা ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে যদি দলে স্থান পায়, দল তা বরদাস্ত করবে না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এক রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেছে। এই আওয়ামী লীগ কলকাতার মাটিতে, অন্য দেশের মাটিতে দলীয় অফিস খুলেছে। ধিক্কার জানাই এসব কর্মকাণ্ডকে যারা উৎসাহিত করেন।
পার্শ্ববর্তী দেশকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাথে যদি বন্ধুত্ব রাখতে চান, এই খুনিদের পুনর্বাসন করে সেটা কোনো বন্ধুত্বের লক্ষণ হতে পারে না। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যাদের বিচার শুরু হয়েছে, যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের আদালতে হস্তান্তর করতে হবে।
জিকে গউছ আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে আওয়ামী লীগ বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করবেন।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের লুটের টাকা দেশে ফিরে আসুক। দেশের মূল অর্থনীতির সাথে এই টাকা মিশে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হোক-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিএনপি যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় যায়, প্রতিশোধের মনোভাব নিয়ে এগোবে না। দেশের আইন সমুন্নত রেখে আদালত অনুযায়ী বিচার হবে। আওয়ামী লীগ আমাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু ধ্বংস করেছে, কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার চায়।
তিনি বলেন, অন্যায়-দুর্নীতি, মানুষকে কষ্ট দেওয়া আর বিএনপির রাজনীতি একসাথে চলতে পারে না। যারা খারাপ মানুষ, তারা বিএনপি করতে পারে না। যারা দুষ্ট মানুষ, তারাও বিএনপি করতে পারবে না।
জিকে গউছ বলেন, যারা এই নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করছেন, তাদের অনুরোধ করব আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন-এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবেন, তারা জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবেন। সেই দিন এরশাদের সমস্ত কুকর্মকে যারা বৈধতা দিয়েছিলেন, তারা এখন বলেন বাংলাদেশে নাকি নির্বাচন হবে না! যে জাতি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যে জাতি নিজের অধিকারের জন্য বুক পেতে দিয়েছে-সেই জাতিকে কেউ কোনোদিন রুখতে পারেনি। দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্র সেই জাতিকে কোনোদিন রুখতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। দেশের মানুষের ভালোবাসা যদি বিএনপির সাথে থাকে, কোনো ষড়যন্ত্র বিএনপিকে রুখতে পারবে না। বিএনপি সারা বাংলাদেশের মানুষের মণিকোঠায়। বিএনপি যা বিশ্বাস করে তাই মুখে প্রকাশ করে। এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক-তার জন্য বিএনপি নিরলসভাবে কাজ করছে। শুধু রাষ্ট্রে নয়, দলের ভেতরেও গণতন্ত্রের চর্চা করছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি শুধু নেতা বানাবে আর আপনারা শুধু ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে ঘুরবেন-এটা বিএনপির প্রত্যাশা না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের সামনে যে আদর্শ রেখে গেছেন, সেই ১৯ দফা আমাদের সামনে রয়েছে। আজ অনেকেই সংস্কার-সংস্কার বলে কাঁদেন। বিএনপি একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক দল। আজ থেকে দুই বছর আগে বিএনপি ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতির সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছে।
সাবেক মেয়র গউছ বলেন, পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে দেশের এমন কোনো সেক্টর রাখেনি যা ধ্বংস করেনি। দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে, গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দিয়েছে, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষের সভা-সমাবেশ ও চিন্তা-চেতনার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। এমন কোনো মানুষ নেই, যিনি বিএনপিকে ভালোবেসে মিথ্যা মামলা, সাজানো মামলা, ভুতুড়ে মামলা আর গায়েবি মামলায় জড়িয়ে নির্যাতনের শিকার হননি।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন বড়লেখা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মীর মখলিছুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, আব্দুল মুকিত, বকসি মিছবাহউর রহমান, নাসির উদ্দিন মিঠু, মোশাররফ হোসেন বাদশা, কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক সাজু, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান খছরু, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মোহাচ্ছান বাদল, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস শহিদ খান প্রমুখ।
দ্বিতীয় অধিবেশনে বড়লেখা পৌর বিএনপির ৯টি ওয়ার্ডের ৬৩৯ জন ভোটারের মধ্যে ৫৯৮ জন কাউন্সিলর গোপন ব্যালটে ভোট দিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচটি পদে নেতা নির্বাচন করেন।