শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে আলোচিত জামাই-শাশুড়ির বিয়ের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার (২৭ অক্টোবর) গোপালপুর আমলি আদালতে শাশুড়ি মাজেদা বেগম বাদী হয়ে হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদের তালুকদার, সদস্য নজরুল ইসলাম এবং কাজীসহ ১১ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। পরে গোপালপুর আমলি আদালতের বিচারক শামছুল হক মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালপুর থানাকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের কড়িয়াটার গ্রামের নুরুল ইসলামের স্ত্রী মাজেদা বেগম ও তার মেয়ের জামাতাকে মারধর করে জোরপূর্বক স্বামীর সাথে তালাক দিয়ে মেয়ের জামাতার সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এতে হাদিরা ইউপির চেয়ারম্যান কাদের তালুকদার, ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামসহ সালিস বৈঠকে উপস্থিত বিচারকরা শাশুড়ি-মেয়ের জামাতার বিয়ের নির্দেশ দেন।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। ‘জামাই-শাশুড়ির বিয়ে’ শিরোনামে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বিধিনিষেধ না মানায় ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয়রা।
বাদীর আইনজীবী টাঙ্গাইল জজকোর্টের অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বলেন, রোববার আদালতে মাজেদা বেগম হাজির হয়ে তার স্বামী নুরুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান ও কাজী গোলাম মওলাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলায় দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালপুর থানাকে তদন্ত ও প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মাজেদা বেগম টাঙ্গাইলে বাসা ভাড়া করে আলাদা বসবাস করছেন।
অভিযুক্ত হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদের তালুকদার জামাই-শাশুড়িকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শাশুড়ি ও জামাইয়ের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। এলাকাবাসী তাদের হাতেনাতে ধরে মারধর শুরু করে। পরে আমি গিয়ে বাধা দিই। তারা পারিবারিকভাবেই তালাক দিয়ে একে অপরকে বিয়ে করেছেন।
এ বিষয়ে গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিয়ের সময় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ করেনি। শুনেছি শাশুড়ি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর তদন্ত ও প্রতিবেদন দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের কড়িয়াটা গ্রামের হতদরিদ্র নুরুল ইসলামের (নুরু) মেয়ে নূরন্নাহারের সাথে এক লাখ টাকার দেনমোহরে পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ি উপজেলার হাজরাবাড়ীর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মোনছের আলীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর সৃষ্টি হয় পারিবারিক কলহ। বিয়ের দেড় মাস পর মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান শাশুড়ি। ৮ অক্টোবর সকালে স্ত্রী, শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি কড়িয়াটাতে আসেন মোনছের। এ সময় স্ত্রী নূরন্নাহার তার অভিভাবকদের স্বামীর সংসার করবেন না বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ গ্রামবাসী সালিস বৈঠক করেন। বৈঠকে মেয়ে স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে অস্বীকার করলে রাগ ও ক্ষোভে মা বলে ওঠেন, ‘তুই না করলে আমি করব।’ আর এতেই মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে শাশুড়ি ও মেয়ের জামাইকে বেধড়ক প্রহারের আদেশ দেন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় মাতব্বররা। এরপর শ্বশুরকে দিয়ে শাশুড়ি এবং মোনছেরকে দিয়ে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন তারা। পরে একই বৈঠকে কাজী গোলাম মওলা শাশুড়ির সঙ্গে মেয়ের জামাইয়ের বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন।