তরফ আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বৃটেনে এক যুবতীর গর্ভে জন্ম নিয়েছে তারই বোন। ভাবছেন কি করে এ সম্ভব হতে পারে? কেমন করে ঘটলো এ ঘটনা? শুনুন তবে। কেট গ্রাহাম নামে একজন বৃটিশ যুবতী নিজের মুখে স্বীকার করেছেন এ কথা। তিনি এ নিয়ে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি মেইল পত্রিকায় বিস্তারিত লিখেছেন। স্বীকার করেছেন কিভাবে তার গর্ভে জন্ম হয়েছে তারই এক বোনের। সেই বোনকে নিজের গর্ভে জন্ম দেয়ার জন্য তিনি তাকে নিজের মেয়ে বলবেন নাকি বোন বলবেন- তা নিয়ে ছিলেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। পরে অবশ্য নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। ওই কন্যাশিশুকে তিনি বোন বলেই সম্বোধন করেছেন।
কেট লিখেছেন, তার মার বিয়ে হয়েছিল। সেই সম্পর্কে তার মা জন্ম দেন তিন সন্তান। তারা হলেন হান্নাহ (২৭), কেট (২৫) এবং হ্যারি (২২)। কিন্তু তাদের জন্ম হওয়ার পর তার পিতা তাদের তেমন কোনো খোঁজখবর রাখতেন না। তাদের বসতি ছিল ওয়েলসে। পিতা দেখাশোনা না করায় তার মায়ের ওপর প্রচ- চাপ পড়ে সন্তানদের মানুষ করার জন্য। তিনি একটি কেয়ার হোমে কঠোর কাজ নেন। এ সময় তার মায়ের বয়স ছিল ৩৬ বছর। একেবারে ফুটন্ত যৌবন তার। ফলে একদিকে সন্তানদের বড় করা, অন্যদিকে নিজের যৌবন। এ সময় তার পাশে একজন শক্ত পুরুষের প্রয়োজন হয়। সময়টা ২০০৬ সাল। তার সঙ্গে পরিচয় হয় ৩৩ বছরের অ্যানড্রু’র। তারা প্রেমে পড়ে যান কেটের মা। এক মাসের মধ্যে তাদের এনগেজমেন্ট হয়ে যায়। এক বছর পরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নিজের জবানিতে এসব কথা লিখেছেন কেট। তিনি লিখেছেন অ্যানড্রু কাজ করতেন ফোর্সেস-এ। বিয়ের পর তিনি একটি সন্তানের পিতা হওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়লেন। কেটের মা-ও একটি ছোট্ট মুখ আশা করছিলেন। তার সময় কাটানোর জন্য এমন একটি ছোট্ট মুখ খুব প্রয়োজন। অ্যানড্রু এবং কেটের মা চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। সহসা এতে তার মা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেন। এতে তার মুখে হাসি যেন ধরে না। কিন্তু আশায় গুঁড়েবালি। হঠাৎ একদিন স্বাভাবিক গর্ভপাত হয়ে গেল কেটের মায়ের। তিনি কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে পড়লেন। ওদিকে হ্যারি জন্ম হওয়ার পর তিনি সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারিয়েছেন। এরপর গর্ভ সঞ্চার হওয়ার পর তার গর্ভপাত হলো। এ অবস্থায় তারা একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলেন। সেখানে কৃত্রিম পদ্ধতিতে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলেন। এবারও তার গর্ভপাত হলো। তারা পরের চার বছর চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না।
ওদিকে মায়ের সঙ্গে কেটের সম্পর্ক বন্ধুর। তখন তিনি ২০ এর কোটায়। কেট লিখেছেন, তিনি তখন ২১ বছর বয়সী যুবতী। কলেজে পড়ার সময় একদিন অপ্রত্যাশিতভাবে তিনিও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেন। জন্ম দিলেন একটি সন্তান। এরপর ২০১৭ সালের ৪ঠা আগস্ট জন্ম হলো আরউইনের। সেই সন্তানের নাড়ি কাটলেন কেটের মা। আরউইনের জন্য ভালবাসা উতলে উঠলো কেটের। তিনি বুঝতে পারলেন কেন তার মা আরেকটি শিশুর জন্য পাগল হয়ে উঠেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আরউইনের সঙ্গে খেলছিলেন কেটের মা ও সৎপিতা অ্যানড্রু। এ সময় তাদের ভালবাসা দেখে কেট আকস্মিকভাবে তাদের বললেন- কেন তোমরা একটি গর্ভভাড়া নিচ্ছ না। তোমরা তোমাদের ডিম্বাণু ফ্রোজেন করতে পারো এবং আরেকবার চেষ্টা করতে পারো। এ সময়ই কেট তার মার কাছে প্রস্তাব দেন, তিনিই গর্ভভাড়ার মতো নিজের পেটে তার মা ও অ্যানড্রুর ডিম্বাণু থেকে সৃষ্ট ভ্রুণ ধারণ করতে চান। তার মায়ের জন্য জন্ম দিতে চান একটি সন্তান। সেই সন্তান হবে তার মায়ের এবং অ্যানড্রুর। তবে জন্ম হবে তার গর্ভে। বার বার চেষ্টার পর ফেব্রুয়ারিতে দেখা গেল কেট অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। তার পেটে বড় হচ্ছে তার মা ও সৎপিতার ডিম্বাণু থেকে তারই বোনের ভ্রুণ। তারপর জন্ম হলো একটি কন্যা সন্তান। তার নাম রাখা হলো উইলো। তাকে কি কেট নিজের মেয়ে ভাববেন? না, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার গর্ভে জন্ম হলেও উইলো হবেন তার মা ও তার সৎপিতা অ্যানড্রুর মেয়ে। তিনি উইলোর দিকে তাকাবেন বোনের মতো।