বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। রোববার বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়।
চার্জশিটে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
রিফাত হত্যা মামলায় গত ২২ আগস্ট আদালতে চার্জশিট জমা দেয়ার দিন ছিল। সেদিন মামলার প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারায় আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হয়নি। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর এ মামলার চার্জশিট দাখিলের দিন ধার্য করেন আদালত। কিন্তু এরই মধ্যে তড়িঘড়ি করে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুই শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন। এরই মধ্যে রোববার হাইকোর্টে জামিন পাওয়া রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
রিফাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, চন্দন সরকার, রাব্বি আকন, হাসান, অলি, টিকটক হৃদয়, সাগর, কামরুল ইসলাম সাইমুন, আরিয়ান শ্রাবণ, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, তানভীর, নাজমুল হাসান, রাতুল সিকদার ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
তবে মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি মুসা বন্ড, ৭ নম্বর আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, ৮ নম্বর আসামি রায়হান ও ১০ নম্বর আসামি রিফাত হাওলাদারকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেয়ার পর মারা যান রিফাত। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে গত ১৬ জুলাই রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দুদিন পরে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
২৬ জুন স্ত্রী মিন্নির সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরদিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।
এর পরদিন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
এর পরদিন বিকেলে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।