শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সারাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর গণভবনের মাছ-হাঁসও নিয়ে গেল জনতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন, ছাড়লেন দেশ

লাকসাম-মনোহরগঞ্জে বিপর্যস্ত কর্মহীন মানুষের পাশে নেই বিএনপির শীর্ষ নেতারা

আরিফুর রহমান স্বপন, কুমিল্লা: মহামারী আকার ধারণ করা প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের থাবায় গত প্রায় ১৫ দিন যাবত অঘোষিত লকডাউনে কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা। অঘোষিত লকডাউনের পর পরই বিশাল এ অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। মহামারী বিপর্যস্ত এ সময়ে কৃষিনির্ভর খেটে খাওয়া দিনমজুর লাকসাম-মনোহরগঞ্জের হতদরিদ্র বিশাল জনগোষ্ঠির সাহায্যার্থে ইতিমধ্যেই সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান ব্যাক্তিরাা এগিয়ে এসেছেন। এগিয়ে এসেছেন রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরোপুরি নিরুত্তাপ বা পিছিয়ে রয়েছে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বিএনপি এবং বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা কর্ণেল আজিম ও আবুল কালামসহ দলটির সাথে জড়িত থাকা এ অঞ্চলের প্রায় ডজনখানেক শিল্পপতি। এমন নিরুত্তাপের ফলে সাধারন জনগোষ্ঠি এমনকি দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গত জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে বিএনপির এসকল শিল্পপতি নেতাদের অবাধ বিচরণ ছিল লাকসাম-মনোহরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মৃত ব্যাক্তির জানাযাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিয়ে, কুলখানীতে দলবেঁধে ঢাকা থেকে ছুটে আসতেন তারা। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তীতে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান বা দলের কোন নেতাকর্মীর অসুস্থতা বা মৃত্যুজনিত কারনেও তাদের কাউকে লাকসাম-মনোহরগঞ্জে দেখা যাচ্ছে না, এমনটাই অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মীদের।

জানাগেছে, দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি কর্ণেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজিম অসুস্থতাজনিত কারনে প্রায় এক বছরেরও বেশী সময় নিজবাড়ী বা এলাকায় আসছেন না। কর্ণেল আজিমের অনুসারী অনেকের মতে তিনি এখন অনেকটাই রাজনীতি বিমুখ রয়েছেন।

অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক লাকসাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম নিজ এলাকায় স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং নিজের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনিও এখন অনেকটাই রাজনীতি বিমুখ। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক সফিকুর রহমানকে। গত কয়েক দিন আগে তাঁর সম্পাদিত সংবাদপত্র “দৈনিক আজকের জীবন” এর ব্যনারে তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে করোনায় বিপর্যস্ত লাকসাম-মনোহরগঞ্জের হতদরিদ্রদের মাঝে কিছু খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

এদিকে, লাকসাম-মনোহরগঞ্জ বিএনপির অন্য শিল্পপতিদের মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক, ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনি, মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইলিয়াছ পাটওয়ারী, শিল্পপতি মোবারক উল্লাহ মজুমদার, সাবেক সহ-সভাপতি শাহ সুলতান খোকনসহ অনেক বিত্তবান নেতাদের এখন আর দেখা যায় না লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বিএনপিতে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আজিম-কালামের সমঝোতায় দুই উপজেলার তিনটি সাংগঠনিক ইউনিটে সমন্বিত এবং অবিভক্ত আহবায়ক কমিটি গঠন হওয়ার পর অজ্ঞত কারনে এঅঞ্চলের বিএনপি নতুন করে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। কমিটি গঠনের পর গত চারমাস অতিবাহিত হলেও এসব কমিটির কোন কার্যক্রম এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। মহামারী করোনা বিপর্যস্ত দুর্যোগ সময়েও লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি বা কমিটির শীর্ষ নেতাদের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি অদ্যাবধি।

লাকসাম পৌরসভা বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব মফিজুর রহমান, তিনি নিজেও দেশের খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ভাইয়া গ্রুপের অন্যতম পরিচালক।

জানা যায়, মফিজুর রহমান লাকসাম পৌর বিএনপির আহবায়ক হলেও তিনি নিজেকে কোথাও বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দেন না। পৌর বিএনপির অন্য নেতাদের সাথেও তার রাজনৈতিক কোন যোগাযোগ নেই। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুন্নবী চৌধুরী মাঝে মাঝে লাকসাম আসলেও বেশীরভাগ সময়ই থাকেন ঢাকায়। মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইউসুফ ভুঁইয়াও বসবাস করেন ঢাকায়। সদস্য সচিব সরওয়ার জাহান দোলন থাকেন কুমিল্লায়। এক কথায় বলতে গেলে লাকসাম-মনোহরগঞ্জ বিএনপি অনেকটাই এখন নেতৃত্বশূণ্য।

বর্তমানে মহামারী করোনা বিপর্যস্ত এই কঠিন দুর্যোগ ও দুঃসময়ে কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির কোন সাংগঠনিক ইউনিট হতদরিদ্র সাধারন জনগোষ্ঠি বা মামলা মোকদ্দমায় জর্জরিত দলের অসহায় নেতাকর্মীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছে না এমনটাই ক্ষোভ তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিপর্যস্ত এই কঠিন সময়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অনেকটাই দিশেহারা বৃহৎ এঅঞ্চলের হতদরিদ্র বিএনপি নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাকসাম-মনোহরগঞ্জ বিএনপির একাধিক নেতারা জানান, আমাদের দুই শীর্ষনেতা কর্ণেল আজিম ও আবুল কালাম এখন আর কারো খবর নেয়না, কোন নেতাকর্মীর ফোন রিসিভ করেননা, রাজনৈতিক মামলায় আমরা সকলেই নিজ খরচে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। করোনা পরিস্থিতির গত ১৫ দিনে বার বার ফোন দিয়েও কোন নেতার ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। মহামারী করোনা বিপর্যস্ত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠি বা দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহমান বাদল বলেন, আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো অসহায় দুস্থ, কর্মহীন ও দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছি।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম খোকন বলেন, বিএনপি বিরোধীদলে থেকেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো অসহায় দুস্থ মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে সীমিত আকারে হলেও তারা কোন শোডাউন করে ত্রাণ বিতরণ করেছেন না বলে তিনি জানান।

লাকসাম পৌরসভা বিএনপির যুগ্ন-আহবায়ক মনির আহমেদ বলেন, আমাদের দুই শীর্ষনেতা কর্ণেল আজিম ও আবুল কালামসহ অন্য বিত্তবান নেতারা ত্রাণসামগ্রী বিতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিঘ্রই করোনায় বিপর্যস্ত লাকসাম-মনোহরগঞ্জের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠি বা দলের নেতাকর্মীদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিবে আমাদের দল। তিনি দলীয় নেতাকর্মীসহ সকলকে বিপদমুহুর্তে ঐক্যবদ্ধ থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর ভরসা এবং দুই শীর্ষনেতা আজিম-কালামের উপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে ধৈর্য্য ধরার আহবান জানান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com