বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ অপরাহ্ন
এডভোকেট মো: মিজান মিয়া : কোভিড-১৯ যা করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। এশিয়ার বিভিন্ন অংশ এবং এর বাইরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব না। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনো কোন কার্যকরী ঔষধ আবিষ্কার হয় নাই।
কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন
কোয়ারেন্টাইন (ইংরেজি: Quarantine) অর্থ সঙ্গনিরোধ বা সঙ্গরোধ। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকা। সংক্রামক ব্যাধি বা মহামারীর বিস্তার প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে মানুষের মুক্তভাবে চলাচল এবং কখনও কখনও কোনও বিশেষ দ্রব্যাদির পরিবহনের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে বোঝায়
আইসোলেশন (ইংরেজি :Isolation বা অন্তরণ) অর্থ বিচ্ছিন্নকরণ বা পৃথককরণ। অর্থাৎ কারও শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে এবং টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হলে, মোট কথা করোনা হয়েছে ধরা পড়লে তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, আইসোলেশন হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য আর কোয়ারেন্টিন হচ্ছে সুস্থ বা আপাত সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য।
আইন কি বলে?
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাময়িক বিচ্ছিন্নকরণ করার বিধান রয়েছে।তাতে বলা হয়েছে, ‘কোনো সংক্রমিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করা না হইলে তাহার মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত হইতে পারেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তিকে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সাময়িকভাবে অন্য কোনো স্থানে স্থানান্তর বা জনবিচ্ছিন্ন করা যাইবে।’
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ অনুসারে সংক্রামক রোগের বিস্তার, তথ্যগোপনে ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আদেশ অমান্য করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই অপরাধের জন্য দন্ড প্রধান করা হয়েছে।
ধারা ২৪ অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং ধারা ২৪ অনুসারে, এই অপরাধের সাজা হবে
৬ মাসের জেল এবং ১ লক্ষ টাকা জরিমানা। বর্তমানে দেখা যায় অনেক রোগী তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নেন যার কারনে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, এই কার্যটি একটি অপরাধ। এই কাজের জন্য এই ধারা অনুসারে আইনের আওতায় আনা যাবে।
ধারা ২৫ অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেন বা নির্দেশনা না মানেন তাহা হইলে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকার শাস্তির বিধান রয়েছে। সুতরাং কোয়ারেন্টাইন এর আদেশ অমান্য করলে এই শাস্তি হতে পারে।আমাদের সমাজে অনেকই কোয়ারেন্টাইন আদেশ অমান্য করে রাস্তা-ঘাট, বাজারে ঘুরে বেড়ান, এই ধারা অনুসারে তাদের শাস্তি হতে পারে।
অন্যদিকে, এই আইনের ধারা ২৬ অনুসারে সঠিক তথ্য থাকার পরও যদি কেউ সেটি গোপন করেন বা ইচ্ছা করে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দেন- সেটিও অপরাধের মধ্যে পড়বে। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির দুই মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
লেখক-
এল.এল.বি (অনার্স), এল.এল.এম
জজ কোর্ট, ঢাকা।