শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো মহা প্রতিযোগিতায় নেমেছে তাই সরকারি প্রাথমিকের বিকল্প হতে পারেনা বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর ফিজার।
সচিবালয়ে সোমবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফিজার বলেন, “কিছু অভিভাবক অ্যাভারেজ স্টান্ডার্টের মধ্যে থাকতে চাচ্ছেন না। কেমন করে ছেলেটা অন্য দেশে যেতে পারবে সেজন্য কিন্ডারগার্টেন শব্দটায় তাদের আলাদা রোমাঞ্চ।”
মানুষের ‘স্বচ্ছলতা বাড়ায়’ দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যাও বাড়ছে- এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, “গ্রামেও কিন্ডারগার্টেন চলে গেছে। মহাপ্রতিযোগিতায় নেমেছে তারা, আমাদের (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) বিট করে কিন্ডারগার্টেন আমাদের বিকল্প হবে। আমি মনে করি কিন্ডারগার্টেন আমাদের বিকল্প হতে পারবে না ইনশাল্লাহ।”
দেশে কতগুলো কিন্ডারগার্টেন রয়েছে সেই হিসাব সরকারের কাছে নেই। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই বাড়ছে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে ব্রিটেন থেকে প্রশিক্ষক এনে বিভাগীয় পর্যায়ের প্রত্যেক সরকারি স্কুলে দুইজন করে শিক্ষককে ইংরেজিতে পারদর্শী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান ফিজার।
তিনি বলেন, “আমরা মাস্টার ট্রেইনারও তৈরি করব, আমাদেরকে কেউ খেয়ে ফেলবে না বরং আমাদের পেটের মধ্যেই ছোটখাটো অনেক কিছু আছে, কারণ আমরাই ৬৫ হাজার (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।”
এবার প্রাথমিক সমাপনীতে ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৩ জন; আর ইবতেদায়ীতে ১২ হাজার ২৬৪ জন।
গত বছর প্রাথমিক সমাপনীতে ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। প্রাথমিকে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন এবং ইবতেদায়ীতে ৫ হাজার ২৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
প্রাথমিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা এবার কীভাবে এত বাড়ল- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “শিক্ষার্থীরা ভালো পরীক্ষা দেওয়ায় ফল ভালো হয়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা সচেতন হয়েছে এবং পরীক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে।”
তাছাড়া এবার প্রাথমিক সমাপনী থেকে এমসিকিউ অংশ তুলে দেওয়ায় জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
প্রাথমিক সমাপনী
>> মোট পরীক্ষার্থী ২৬ লাখ ৫২ হাজার ২৮৯৬ জন; তাদের মধ্যে ছাত্র ১২ লাখ ১১ হাজার ৬০০ জন, ছাত্রী ১৪ লাখ ৪১ হাজার ২৯৬ জন
>> উত্তীর্ণ হয়েছে ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯০৪ জন; পাসের হার ৯৭.৫৯%
>> জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন লাখ ৬৮ হাজার ১৯৩ জন
>> পরীক্ষার্থীদের বাংলায় ৯৯ দশমিক ৪৯%, ইংরেজিতে ৯৯ দশমিক ১০%, গণিতে ৯৮ দশমিক ৮৬%, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ৯৯ দশমিক ৪১%, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৪৬% এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায় ৯৯ দশমিক ৭৮% শিক্ষার্থী পাস করেছে
>> পাসের হারের বিবেচনায় বিভাগগুলোর মধ্যে শীর্ষে ঢাকা (৯৮.২৫%)’ আর জেলায় জয়পুরহাট (৯৯.৭৪%) সবার ওপরে
>> এবার সর্বনিম্ন পাসের হার সিলেট বিভাগে ৯৪.৭৬%; জেলাগুলোর মধ্যে কম পাস করেছে সুনামগঞ্জে- ৯১.৯৫%
>> ১৬ উপজেলায় শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে
ইবতেদায়ী সমাপনী
>> মোট পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৭; তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার ৫২৫ জন, ছাত্রী ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮২ জন
>> উত্তীর্ণ হয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৭ জন; পাসের হার ৯৭.৬৯%
>> জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ২৬৪ জন
>> পরীক্ষার্থীদের ৯৯ দশমিক ৫৬% বাংলায়, ৯৮.৯৪% ইংরেজিতে, ৯৯.৫৬% গণিতে, ৯৯.৯০% কুরআন ও তাজবীদ এবং আকাইদ ও ফিকহ্ বিষয়ে, ৯৯.৫১% আরবিতে এবং ৯৯.৫০% পরিবেশ পরিচিতি সমাজ ও পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞানে পাস করেছে
>> পাসের হার বিবেচনায় বিভাগগুলোর মধ্যে শীর্ষে রাজশাহী (৯৮.৮৮%), জেলার মধ্যে গোপালগঞ্জ, মেহেরপুর ও নওগাঁয় পাসের হার ১০০%
>> ১৭৩ উপজেলায় শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে
>> পাসের হার সর্বনিম্ন সিলেট বিভাগে ৯৫.৫৮%। জেলাগুলোর মধ্যে কম পাস করেছে কিশোরগঞ্জের শিক্ষার্থীরা, ৯২.৫১%
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছাড়াও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।