সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ফেনী : মৃদুলা রানী সাহার বয়স প্রায় ৮০ বছর। তাঁর পাঁচ ছেলেমেয়ে, সবাই প্রতিষ্ঠিত। মৃদুলার দুই ছেলে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করেন, এক ছেলে বিসিএস কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে দুই মেয়ে থাকেন শ্বশুরবাড়ি। অথচ মৃদুলাকে গ্রামের বাড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে হলো তিন দিন! খোঁজ নেননি কোনো সন্তান। শেষে পুলিশ গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে এই বৃদ্ধার।
ফেনী পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মধুপুরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। সেখানকার পোদ্দার বাড়ির বাসিন্দা মৃদুলা রানী সাহা। তাঁর স্বামী হরিপদ সাহা ছিলেন ফেনী শহরের একজন প্রভাবশালী চাল ব্যবসায়ী। তাঁর পাঁচ ছেলেমেয়ের সবাই প্রতিষ্ঠিত, পরিবার নিয়ে শহরে বাস করেন। তিন দিন ঘরের দরজা না খোলায় এবং ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা মুমূর্ষু মৃদুলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তির পর দেখতে যান ফেনীর পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার কবীর। তাঁর চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসায় তাঁর অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা মৃদুলা রানী সাহাকে দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে। মৃদুলার সঙ্গে অমানবিক আচরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য আজ বুধবার তাঁর ছেলেমেয়েদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডাকা হয়।
মৃদুলার তিন ছেলে টুটুল সাহা, সুশান্ত সাহা, বাপ্পি সাহা এবং মেয়ে শর্বরী সাহা বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উপস্থিত হন। তাঁরা এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। ছেলেদের দাবি, তাঁরা নিয়মিত মায়ের খোঁজ নিতেন। কিন্তু গত কয়েক দিন খবর নিতে পারেননি। ওই সময়েই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ সময় ফেনীর পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সন্তানদের কাছ থেকে লিখিত মুচলেকা নেন। ভবিষ্যতে এমন কাজ আর হবে না বলে অঙ্গীকার করেন মৃদুলার সন্তানেরা। মৃদুলা রানী সাহার সন্তানেরা ঠিকভাবে তাঁর দেখভাল করছেন কি না, সেই বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফেনী সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন সাহাকে।
ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’-এর প্রধান সমন্বয়ক মঞ্জিলা আক্তার মিমি জানান, সার্বিক দেখাশোনা করার মাধ্যমে মৃদুলা রানী সাহাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফেনীর পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে অমানবিক আচরণের জন্য সন্তানদের কাছ থেকে মুচলেকা ও অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ফেনীর সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, মৃদুলা রানী সাহাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাঁর কিছু শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। আগের চেয়ে তাঁর অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে।