শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
স্পোর্টস ডেস্ক : শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াইয়ের সাক্ষ্মী হলো ইতিহাদ স্টেডিয়াম, যার পরতে পরতে ছিল উত্তেজনার রেণু। প্রথম ১১ মিনিটে হলো চার গোল। ১০ মিনিট পর আরেকটি। ম্যাচের চিত্রপট পাল্টালো বারবার। শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর এক জয় পেলো ম্যানচেস্টার সিটি; কিন্তু লক্ষ্য ছোঁয়া হলো না। বরং হারের হতাশা ভুলে মূল্যবান অ্যাওয়ে গোলের ভেলায় চেপে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠল টটেনহ্যাম হটস্পার।
বুধবার রাতে শেষ আটের ফিরতি পর্বে ৪-৩ গোলে জিতে সিটি। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-৪। প্রতিপক্ষের মাঠে গোল করায় শেষ চারের টিকেট পায় টটেনহ্যাম। প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জিতেছিল মাওরিসিও পচেত্তিনোর দল।
অসাধারণ এই জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমি-ফাইনালে ওঠার কীর্তি গড়লো টটেনহ্যাম। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ শেষ ষোলোয় রিয়াল মাদ্রিদ ও কোয়ার্টার-ফাইনালে ইউভেন্তুসকে হারানো আয়াক্স।
দুই লেগের লড়াইয়ে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন মূলত সন হিউং-মিন। প্রথম লেগের জয়সূচক গোলের পর দক্ষিণ কোরিয়ার এই ফরোয়ার্ড প্রতিপক্ষের মাঠে করলেন মহামূল্যবান দুটি গোল। রাহিম স্টার্লিংয়ের জোড়া গোলে শেষ চারের স্বপ্ন জেগেছিল সিটি শিবিরে। কিন্তু শেষটা সুখকর হয়নি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নদের।
গোল উৎসবের শুরু চতুর্থ মিনিটে। সতীর্থের সঙ্গে একবার বল দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সে রক্ষণচেরা পাস বাড়ান কেভিন ডি ব্রুইনে। জায়গা বানিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন স্টার্লিং।
সিটির দুই লেগ মিলিয়ে ১-১ সমতা টানার স্বস্তি স্থায়ী হয় মাত্র তিন মিনিট। আক্রমণ রুখতে গিয়ে ফরাসি ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্ত বল ঠেলে দেন হিউং-মিনের পায়ে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া নিচু সোজাসুজি শট গোলরক্ষক এদেরসনের পায়ে লেগে ভিতরে ঢোকে।
আর দশম মিনিটে দারুণ এক গোলে স্বাগতিক সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেন হিউং-মিন। ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনের পাস ডি-বক্সে পেয়ে ডান পায়ের উঁচু শটে দূরের পোস্ট দিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি।
পরের মিনিটে সৌভাগ্যসূচক গোলে ম্যাচে সমতায় ফেরে সিটি। কাছ থেকে বের্নার্দো সিলভার নেওয়া শট ঠেকাতে একটু আগেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন উগো লরিস, বল ডিফেন্ডার ড্যানি রোজের পায়ে লেগে দিক পাল্টে গড়াতে গড়াতে গোললাইন পেরিয়ে যায়।
২১তম মিনিটে ডি ব্রুইনে ও স্টার্লিংয়ের দারুণ বোঝাপড়ায় আবারও এগিয়ে যায় সিটি। ডান দিক থেকে বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের দূরের পোস্টে বাড়ানো দুর্দান্ত এক ক্রস পেয়ে কোনাকুনি শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন ছন্দে থাকা ইংলিশ মিডফিল্ডার। ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় সিটি, দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৩-৩। তবে মূল্যবান অ্যাওয়ে গোলে এগিয়ে থাকে অতিথিরা।
বিরতির পর প্রতিপক্ষের রক্ষণে প্রচণ্ড চাপ বাড়ানো সিটি ৫৯তম মিনিটে আগুয়েরোর নৈপুণ্যে ব্যবধান বাড়ায়। ডি ব্রুইনের রক্ষণচেরা পাস ডি-বক্সে ডান দিকে পেয়ে জোরালো কোনাকুনি শটে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ৪-৩ করেন আর্জেন্টাইন তারকা। সিটির আকাশে উঁকি দেয় সেমি-ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন।
কিন্তু আবারও নাটকীয়তা। ৭৩তম মিনিটে সেটপিসে ম্যাচে সমতা টানে টটেনহ্যাম। কিরান ট্রিপিয়ারের কর্নারে উড়ে আসা বল ছোট ডি-বক্সে স্পেনের ফের্নান্দো লরেন্তের ঊরুতে লেগে জালে জড়ায়। বল তার হাতে লেগেছিল কি-না, ভিএআর দেখে গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইনে সমতা ফেরে; কিন্তু অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে ফের এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম।
যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে স্টার্লিং জালে বল পাঠালে উচ্ছ্বাসে মাতে স্বাগতিক সমর্থকরা। সাইডলাইনে পেপ গুয়ার্দিওলার উল্লাস ছিল বাঁধনহারা। তবে সব আনন্দ উবে যায় মুহূর্তেই। আক্রমণ তৈরির সময় আগুয়েরো অফসাইডে থাকায় ভিএআরের সাহায্যে বাতিল হয় গোল। ম্যাচ শেষে সিটি খেলোয়াড়দের চোখে মুখে ছিল হতাশা, কারো চোখে পানি। দুর্দান্ত এ জয়ের পরও যে বিদায় নিতে হলো ইউরোপ সেরার মঞ্চ থেকে।
একই সময়ে শুরু হওয়া অন্য ম্যাচে পোর্তোকে তাদেরই মাঠে ৪-১ গোলে হারিয়ে দুই লেগ মিলে ৬-১ ব্যবধানে এগিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছে লিভারপুল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা।