শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের বাহুবলে জাইকার অর্থায়নে ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে কৃষি শিল্প ও হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। রাস্তার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের পক্ষে উপজেলা প্রকৌশলী সাফাই গাইলেও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন হাওর অঞ্চলের ভুক্তভোগী জনতা।
এদিকে অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ দায়ের করেছেন ইউপি সদস্য আব্দুল করীম।
জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ৩নং সাতকাপন ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামে ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’ (জাইকা) এর অর্থায়নে চলছে কৃষি শিল্প ও হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণের কাজ।
২২ শ’ ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার কাজ।উপজেলা এলজিইডির তত্ত্বাবধানে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ‘হাসান এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। চলতি অর্থ বছরে কাজটি সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২০/২৫ শতাংশ কাজ। তবে এরই মধ্যে নানা অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে প্রকাশ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাটি প্রভাবশালী হওয়ায় সরকারী সিডিউল এর কোন তোয়াক্কা না করে কাজে ব্যবহার করছে নিম্নমানের সামগ্রী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, , ঢালাইয়ে সিলিকা বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটি। শ্রমিকরা নৌকা দিয়ে এ মাটি সংগ্রহ করছে পার্শ্ববর্তি হাওর থেকে। সি.সি ঢালাইয়ের মিক্সিংয়েও চলছে তুঘোলকি কান্ড। ৬.৩.১ (কংকিট, বালু ও সিমেন্ট) অনুপাতে ঢালাইয়ের মিশ্রন করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। মিশ্রনকৃত ঢালাইয়ের কোন কোন স্থানে অণুবিক্ষন যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ‘কংক্রীট।।
ফলে কাজ শেষ হতে না হতেই ফেটে যাচ্ছে ঢালাই। এ অবস্থায় চৌকস শ্রমিকেরা ‘ফাঁটল ধরা সি.সি ঢালাই’ ঢেকে দিচ্ছেন ‘আর.সি.সি ঢালাই’ দিয়ে।
‘সি.সি-আর.সি.সি’ ঢালাইয়ের উচ্চতা নিয়েও করা হচ্ছে ‘নয়-ছয়’। বিশেষ কৌশলে দেয়া হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ১১ ইঞ্চি উচ্চতার ঢালাই করার কথা থাকলেও দু/একটি স্থান ছাড়া এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সিডিউল অনুপাতে ‘সি.সি’ ও ‘আর সি.সি’ ঢালাই হবার কথা ছিল যথাক্রমে ৪+৭ ইঞ্চি। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।
শুধু তাই নয়, নির্মাণ শেষ হয়েছে এমন কিছু স্থান ঘুরে ‘আর.সি.সি’ ঢালাইয়ে রডের চিহ্নও দেখা যায়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইট,বালু,রড, সিমেন্টসহ সকল সামগ্রিই নিন্মমানের। ফলে নির্মাণ শেষ হবার ৬ মাসের মধ্যেই ভেঙ্গে যেতে পারে সড়কটি।
তাদের অভিযোগ, গাইডওয়ালের উচ্চতাও সিডিউল অনুপাতে হয়নি। এখানেও উচ্চতা বাড়াতে বিশেষ কৌশল নেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকল্প এলাকায় ‘সিডিউল বোর্ড নেই’। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদারের সহযোগী ইয়াসিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি জানান, সাইনবোর্ড লেখার কাজ চলছে। আজ-কালই তা লাগানো হবে। রাস্তার কাজ ভালোই চলছে কোথাও কোন অনিয়ম হচ্ছেনা বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে সাতকাপন ইউপির ২নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল করিম বলেন, ‘আমরা প্রথমে এ অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি। ঠিকাদার আমাদের কথায় পাত্তাই দেননি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ এখানে লুটের মহোৎসব চলছে। চলছে কোটি টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা। আমরা কোন অবস্থাতেই চোখের সামনে সরকারের টাকা অপচয় হতে দেব না।’
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. আব্দাল মিয়া বলেন, ‘অনিয়মের কথা শুনেছি। আমি নিজে গিয়ে দেখে যা করণীয় আছে তাই করব।’
তবে বাহুবল উপজেলা প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ভূইয়া ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন প্রকল্পের কাজ খুব ভাল ভাবেই চলছে।
এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা তালুকদার বলেন, ‘আমি প্রকল্পটি দুইবার পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে দরখাস্ত পেয়েছি,আমি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমানও রবিবার দুপুরে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে অনিয়মের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।