রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাহুবলে মরহুম মকসুদ আহমেদ লেবু’র স্মরণে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত কবরস্থান নিয়ে বিরোধ; হামলার ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত মিরপুর দি হোপ স্কুলে শিক্ষার মানোন্নয়ন শীর্ষক সেমিনার গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে

অন্যের বিপদে সাংবাদিক, তার বিপদে কেউ থাকেনা

সাংবাদিকরা দেশের অমুক। সাংবাদিকরা দেশের তমুক। সাংবাদিকার দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। তাদের কারণেই দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু ধারা অব্যাহত থাকে।  তারা সঠিক তথ্য দেয় না- এমন নানা মন্ত্রব্য। একটু আগেও এক আইনজীবী সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য সরবরাহ করে না বলে কথা অভিযোগ করলেন।  কিন্তু সাংবাদিকরা যখন কোন অন্যায়, অবিচার, হামলা, মামলার স্বীকার হয় তখন তাকে একাই মোকাবিলা করতে হয়। প্রতিদিন প্রেস ক্লাবের সামনে শত শত মানববন্ধন হয়। মাইকের শব্দে কানে তালা লেগে যায়। রাতে টেলিভিশন টকশোতে বুদ্ধিজীবীরা নানা ইস্যুতে চৌদ্দ-গোষ্ঠী উদ্ধার করেন। কিন্তু গায়েবি ভয়ে সাংবাদিকের পক্ষে ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত বিষয়গুলো তুলে ধরেন না। মনে হয় যেন রাষ্ট্রের একশ্রেণির সুশীলরা কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, অনেক সময় সাংবাদিক সংগঠনগুলোও কোনো ভূমিকা রাখে না।
এমনকি একটি বিবৃতি পর্যন্ত দেয় না। কত বিষয় নিয়েই তো সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তখনতো ভয় পান না। ভয় পান সাংবাদিকের পক্ষে যুক্তি সঙ্গত কথা বলতে। এমন ভাবার যক্তি নেই,  সাংবাদিকের পক্ষে কথা বলার জন্য সরকার কারো ঘাড় মটকাবে। বরং এই বিষয়ে কথা বলার কারণে সরকার ধূম্র একটি বিষয়ে পরিষ্কার হন।  এই যদি হয় একজন সাংবাদিকের অবস্থা, তাহলে সঠিক সংবাদ পাবেন কী করে?
প্রশ্ন করতে পারেন, কেন এমনটি মনে হচ্ছে? খুলনার সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্লা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক। গত ৩০ শে ডিসেম্বর খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে মোট ভোটারের চেয়ে ২২ হাজারেরও বেশি ভোটগ্রহণ হয়েছে মর্মে বাংলা ট্রিবিউন ও দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় ১লা জানুয়ারি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ওই দিন দুপুরেই ওই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। শুধু গ্রেপ্তারই নয়, দুই হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাকে থানায় নেয়া হয়। হয়তো সুযোগ থাকলে পুলিশ তাকে ডান্ডা বেড়িও পরাতো। এই ঘটনায় কেউ টুঁ শব্দও করেনি।
তবে শুক্রবার প্রথম আলো পত্রিকায় ‘ভুলটা কার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উঠে আসে ওই দিন আসলে ভুলটি ছিল কার। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকা সাংবাদিকেরা বলছেন, ওই ভুলের সূত্রপাত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের ঘোষণা থেকে। সেদিনকার একটি ভিডিওতেও দেখা যায়, জেলা প্রশাসক নিজের মুখে বলছেন, নৌকার প্রার্থী ২ লাখ ৫৩ হাজার ও ধানের শীষের প্রার্থী ২৮ হাজার ১৭০ ভোট পেয়েছেন। ওই দুই ভোটসংখ্যার যোগফল খুলনা-১ আসনের মোট ভোটারের চেয়ে ২২ হাজার বেশি। ঘণ্টাখানেকের পরে জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে আবারও ওই আসনের ফল ঘোষণা করেন। তখন বলা হয়, ১ লাখ ৭২ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস।
সাংবাদিকদের তোলা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক বলছেন, ‘…ধানের শীষ ২৮ হাজার ১৭০ ভোট, নৌকা ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬৯।’ তখনই একাধিক সংবাদকর্মী দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এর আগে যখন বলেছিলেন, তখন ধানের শীষের ভোট ২৯ হাজার বলে ঘোষণা এসেছিল। ওই কথা শুনে জেলা প্রশাসক জিবে কামড় দিয়ে হাতের কাগজটি ভালোভাবে দেখছিলেন। ওই কাগজ থেকে তিনি ভোটের ফল পড়ছিলেন। এর ঘণ্টাখানেক পরে জেলা প্রশাসককে বলতে শোনা যায়, ‘ভোটকেন্দ্র ১০৭, আমরা ফলাফলও পেয়েছি ১০৭। বিজয়ী ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৯ ভোটে, পঞ্চানন বিশ্বাস আর উনার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ ২৮ হাজার ৪৩৭ ভোট।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে দেশে তো অনেক পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও, অনলাইন মিডিয়া রয়েছে। এরা জাতীয় নির্বাচনের নিউজ কাভারেজ করতে গিয়ে বেশ কিছু সাংবাদিক কার্ড-স্টিকিার পাননি। অথচ এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে তেমন কোনো প্রতিবেদন চোখে পড়েনি।
আমরা প্রায় সবাই জানি একজন সাংবাদিক খবরের ফেরিওয়ালা। খবর সংগ্রহ করাই তার কাজ। যেখানে অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি-অনিয়মের ছড়াছড়ি- সেখানেই তার পদচারণা। সংবাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ। নানা তথ্য প্রমাণাদি সংগ্রহ। এভাবে প্রস্তুত করা হয় একটি রিপোর্ট। এখানেই শেষ নয়। এরপর রিপোর্টটি চিফ রিপোর্টার, বার্তা সম্পাদক ও সম্পাদকের হাত ঘুরে পরের দিন প্রকাশিত হয় রিপোর্টটি। রিপোর্টের সত্যতা না পেলে সেখানেই রয়ে যায় প্রতিবেদনটি। এমন ঘটনা অহরহ ঘটে। এত কিছুর পর যখন প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়, তখন এক পক্ষ বাহবা দেয় অপর পক্ষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে। তাকে সামনে পেলে খুন করার মতো অবস্থা। পলিটিক্যাল রিপোর্ট করা তো আরো কঠিন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ- বিএনপিকে নিয়ে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে। একটি সত্য ঘটনা। তবু যে দল ক্ষমতাসীন সেই দলের বিপক্ষে নিউজটি গেলে বিপত্তি বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
আসলে, পাঠক একজন সাংবাদিকের কাছে কি জানতে চায়? কোনো একটি দল বা গোষ্ঠীর পক্ষপাতমূলক  প্রতিবেদন? সবাই বলবেন না, আমিও বলছি মোটেই না। মূলত পাঠক চায় সঠিক সংবাদ। আর কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশন যদি পাঠকের সেই চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে পাঠক সেই মিডিয়াকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে। শুধু তাই নয় অন্যের কাছে বলতে থাকেন, অমুক মিডিয়া অমুকের দালাল। অমুক সাংবাদিক তমুকের দালাল। আর এসব বিষয়কে মাথায় রেখে দু-একজন সম্পাদক বাদে সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করে সঠিক খবর পরিবেশন করার জন্য।
এক সাংবাদিক বন্ধু জানায়, নির্বাচনের আগে তাদের পত্রিকায় এক প্রার্থীর টানা নির্বাচনী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে ওই প্রার্থীর কেউ তাদেরকে ধন্যবাদ পর্যন্ত দিতে প্রয়োজনবোধ করেননি। এর কয়েকদিন পর ‘সাংবাদিকের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের’ একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় তাদের পত্রিকায়। যদিও ওই রিপোর্টে কারা গাড়ি ভাঙচুর করেছে তা উল্লেখ করা হয়নি। তবু ওই প্রার্থীর এক কর্মী সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সাংবাদিককে গাড়ি ভাঙচুরের রিপোর্ট করার কারণ জানতে চায়। পারলে তো জীবন্ত গিলে ফেলে। এবার বুঝেন সাংবাদিকতা কাকে বলে?
রাশিম মোল্লা, স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক মানবজমিন
mdrashim@gmail.com

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com