বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: পটুয়াখালীর খেপুপাড়া ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অংশ দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যায় উপকূল স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৯ ফুট (৩ মিটার) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতি নিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে সিত্রাং।
এ সময় শুরু হয় প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি। ঝড়ের প্রভাবে গাছ পড়ে বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখে পড়েছে অনেক অঞ্চল। সিলেটে জরুরি অবতরণ করেছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ৮টি ফ্লাইট।
রাত পৌণে ১টায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে ওসমানী থেকে ফ্লাইট উঠানামা বন্ধ ছিল। কিন্তু রাত সাড়ে নয়টা থেকে এ পর্যন্ত ৮টি ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করেছে। এর মধ্যে ৭টিই আন্তর্জাতিক আর অপরটি ডমেস্টিক। ঝড়ের ধাক্কা এসে লেগেছে রাজধানীতেও। দিনরাত ঝরছে বৃষ্টি। রাতে বয়ে গেছে ঝোড়ো হাওয়া। দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
ঝড়ে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাসন, বরগুনা, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ এবং নড়াইলের লোহাগড়ায় ঝোড়ো বাতাসে গাছ ভেঙে অন্তত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে ঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় কুমিল্লায় মারা গেছেন একই পরিবারের তিন সদস্য। সোমবার রাত ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল গ্রামে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ভোলায় দুজন, সিরাজগঞ্জে দুজন, নড়াইল ও বরগুনায় একজনের প্রাণ গেছে।
এদিকে মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করছে। এসময় জলোচ্ছ্বাস বাড়বে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় অমাবস্যা থাকায় জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে। এ কারণে দেশের উপকূলের বেশির ভাগ এলাকা ওই জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এর সঙ্গে ভারি বৃষ্টি যুক্ত হওয়ায় দেশের উপকূলের সব কটি জেলায় স্বল্প স্থায়ী বন্যা হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার দিবাগত রাতেই ঘূর্ণিঝড়টি রাজধানীর ওপর দিয়ে সিলেট হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এ সময় এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উপকূলসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
ঝোড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টির আশঙ্কায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলসহ দেশের ১৫টি উপকূলীয় জেলাকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
১৭ জাহাজ ও ৪ কপ্টার-এমপিএ নিয়ে প্রস্তুত নৌবাহিনী
‘সিত্রাং’ পরবর্তী জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ১৭টি জাহাজ, দুইটি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট (এমপিএ) এবং দুইটি হেলিকপ্টার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি, উপকূলীয় দুর্গত এলাকাগুলোতে মোতায়েনের জন্য নৌ কন্টিনজেন্ট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপে উদ্ধার কাজের জন্য বানৌজা সমুদ্র অভিযান কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ এলাকায়, বানৌজা পদ্মা কুতুবদিয়া ও বহিঃনোঙর এলাকায়, বানৌজা হাতিয়া এবং এলসিটি-১০৩ সন্দীপ ও হাতিয়ার সামনে এলাকায়, এলসিভিপি-১১ পটুয়াখালী এলাকায় ও এলসিভিপি-১২ পিরোজপুর ও বরগুনা এলাকায় নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়া জরুরি অনুসন্ধান ও উদ্ধারের জন্য খুলনার মোংলায় বানৌজা স্বাধীনতা, প্রত্যাশা, প্রত্যয়, ধলেশ্বরী, নির্মূল ও অনুসন্ধান প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের পাগলায় বানৌজা অদম্য, অতন্দ্র, দুধর্ষ ও দুর্দান্ত ও ধানসিড়িকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।