মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ অপরাহ্ন
স্পোর্টস ডেস্ক : শুরু আর শেষে দারুণ বোলিংয়ে বোলাররা রংপুরকে আটকে রাখলেন মাঝারি স্কোরে। ব্যাটিংয়ে কেউ বড় রান না করলেও অবদান রাখলেন কয়েকজন। দারুণ দলীয় পারফরম্যান্সে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুরকে বিদায় করে ফাইনালে উঠল ঢাকা ডায়নামাইটস।
বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস। দ্বিতীয় দল হিসেবে পা রেখেছে ফাইনালে। মিরপুরে বুধবার রংপুরকে ১৪২ রানে বেঁধে রেখে ঢাকা জিতেছে ২০ বল বাকি রেখেই।
টস হেরে ব্যাটিং নামা রংপুরকে থমকে দেয় দুই স্পেলে রুবেল হোসেনের দুটি করে উইকেট। বল হাতে ২ উইকেটের পর ৫ ছক্কায় ১৯ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে ফেরেন আন্দ্রে রাসেল।
শুক্রবারের ফাইনালে ২০১৬ আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা খেলবে ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুরের শুরুটা ছিল দলের জন্য আশা জাগানিয়া। যথারীতি প্রথম দুই ওভার দেখে খেলেছেন গেইল। তৃতীয় ওভার থেকে ঝড়ের শুরু। রাসেলকে ওড়ান দুটি ছক্কায়।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা নাদিফ চৌধুরী শুরুতে টাইমিং পেতে লড়ছিলেন। চতুর্থ ওভারে পেয়ে বসেন শুভাগত হোমকে। ছক্কা মারেন টানা তিনটি।
হ্যাটট্রিক ছক্কার পরই আসে হ্যাটট্রিক উইকেট। শুভাগত ওই ওভারের শেষ বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় আউট হন নাদিফ। ১২ বলে করেছেন ২৭ রান।
পরের ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি বাজে শটে রুবেল পান দুটি উইকেট। অনেক বাইরের বল শুরুতে ছেড়ে দিয়েও শেষ মূহুর্তে চালিয়ে দেন গেইল। ১৩ বলে ১৫ করে ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে।
টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার রাইলি রুশো খেলেন বিস্ময়কর শট। আউট হন প্রথম বলেই শর্ট ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গিয়ে। রুবেল নেন ডাবল উইকেট মেডেন।
ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেন বোপারা ও মিঠুন। এক-দুই করে দলকে টেনে নেওয়ার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বল পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিতে। সাকিবের বলে টানা ছক্কা আসে মিঠুনের ব্যাটে।
মিঠুনও পরে আউট হন আলগা শটে। বাঁহাতি পেসার কাজি অনিককে উইকেট নিয়ে আসেন অনেক বাইরের বলে চালিয়ে দিয়ে (২৭ বলে ৩৮)।
১২ ওভার শেষে রংপুরের রান ছিল ৩ উইকেটে ৯৮। দৃষ্টি ছিল তাদের বড় স্কোরে। কিন্তু মিঠুনের পর একের পর এক উইকেট হারিয়ে সেই লক্ষ্য চলে যায় দৃষ্টি সীমার বাইরে।
আরেক প্রান্তে উইকেট পতনের স্রোতে এক পাশ আগলে রেখেছেন বোপারা। শেষ ওভারে রুবেলের প্রথম তিন বলে একটি ছক্কা, দুটি চারে বাড়ান রান। পরের বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েছেন সীমানায়। আউট হয়েছেন ৪৩ বলে ৪৯ করে। ৩৬ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারায় রংপুর।
সেই স্কোরেও লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে রংপুর। অধিনায়ক মাশরাফি প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন আগের দুই ম্যাচে রান পাওয়া উপুল থারাঙ্গাকে। তিন বাউন্ডারির পর সুনিল নারাইন আউট হন নাজমুল অপুকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে।
তৃতীয় জুটিতে রনি তালুকদার ও সাকিব আল হাসান গড়েন কার্যকর জুটি। তবে বেনি হাওয়েলকে একটি করে চার ও ছক্কা মারার পর উইকেট উপহার দিয়ে আসেন সাকিব। স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন ২০ বলে ২৩ করে।
তখনও ঢাকার বিপদ আঁচ করা যায়নি খুব একটা। কাইরন পোলার্ড নেমে চার ও ছক্কার দেখা পেয়ে যান। তবে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পোলার্ডকে ফিরিয়ে দেন মাশরাফি। ২২ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে উঠে যান টুর্নামেন্টে উইকেট শিকারের শীর্ষে।
ওই ওভারেই আরেকটি বড় ধাক্কা হজম করে ঢাকা। ২৪ বলে ৩৫ করে রান আউট হয়ে যান রনি তালুকদার।
রংপুর তখন খানিকটা চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছিল। তবে নুরুল হাসান সোহান ও আন্দ্রে রাসেল ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দেন পরিস্থিতি। থিতু হওয়ার পর হাত খোলেন রাসেল। মাশরাফি ও শফিউলকে বিশাল দুটি ছক্কায় সরিয়ে দেন চাপ। পরে অপুকে টানা তিনটি ছক্কায় শেষ করে দেন ম্যাচ।
সাকিবের নেতৃত্বে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠল ঢাকা। ছয় আসরে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠতে পারলেন না অধিনায়ক মাশরাফি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ১৯.৪ ওভারে ১৪২ (গেইল ১৫, নাদিফ ২৭, মিঠুন ৩৮, রুশো ০, বোপারা ৪৯, হাওয়েল ৩, মাশরাফি ০, নাহিদুল ৪, ফরহাদ ২, শফিউল ০, অপু ০*; রাসেল ৪-০-৩১-২, রুবেল ৩.৪-১-২৩-৪, শুভাগত ১-০-১৮-১, সাকিব ৪-১-২৯-১, নারাইন ৪-০-১৮-০, অনিক ৩-০-২১-২)।
ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৬.৪ ওভারে ১৪৭/৫ (থারাঙ্গা ৪, নারাইন ১৪, রনি ৩৫, সাকিব ২৩, পোলার্ড ১৪, সোহান ৯*, রাসেল ৪০*; মাশরাফি ৪-০-৩২-২, ফরহাদ ১-০-১৩-০, অপু ৩.৪-০-৪৭-১, শফিউল ৩-০-২০-০, নাহিদুল ২-০-১৬-০, হাওয়েল ৩-০-১৭-১)।
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রুবেল হোসেন