সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

মাশরাফির ‘শেষ’ রাঙিয়ে দিলো সিলেট

তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : যদিও ওয়ানডে অধিনায়ক আগেই বলেছিলেন, যা গেছে তা নিয়ে চিন্তা করলে পরের কাজও খারাপ হবে। তবুও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের পক্ষে জয় ধারাটা একটু বিপরীতেই চলে। কিন্তু সেই সিলেটের মাঠেই জয় দিয়ে উইন্ডিজদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশ। ২-১ ব্যবধানে উইন্ডিজকে হারিয়ে বাংলাদেশ জিতে নিলো ২৪তম ওয়ানডে সিরিজ।

ক্রিকেট পাড়া ও সমর্থকদের মধ্যে কিছুদিন থেকেই গুঞ্জন ২০১৯ বিশ্বকাপের পর আর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠে দেখা যাবে না মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। যদিও অধিনায়ক নিজে সরাসরি কখনোই তেমন কিছু বলেননি তবুও মাঝে মাঝেই তার আভাস কিছুটা দিয়েছেন। সে হিসেব করলে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের আগে শুক্রবারের (১৪ ডিসেম্বর) এই ম্যাচটিই বাংলাদেশে দেশের মাটিতে শেষ ম্যাচ। তাই আলোচনায়, সর্বত্র মাশয়ারফির ‘শেষ’ ম্যাচ।

আর সেই ম্যাচে বাংলাদেশ পেলো ৮ উইকেটে জয়। ওপেনার তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের ৪৪তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি ও সৌম্য সরকারের ৭ম হাফসেঞ্চুরিতে সহজ জয় পায় বাংলাদেশ।

 ৬৪ বলে চার হাঁকিয়ে নিজের ৫০ পূর্ণ করেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম। ১৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার তামিম ও লিটন দাসের ব্যাটে ভালোই আগাতে থাকে বাংলাদেশ। তবে দলীয় ৪৫ রানে ফেরেন লিটন। ব্যক্তিগত ৩৩ বলে ২৩ রানের মাথায় কেমো পলের বলে রভমন পাওয়েলের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

তামিমের সঙ্গে যোগ দেন সৌম্য সরকার। শুরু থেকেই হাত খুলে খেলেতে থাকেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তার এলোপাতারি চার-ছক্কায় দিক্বিদিক হয়ে পড়ে উইন্ডিজ বোলাররা।  ৬২ বলে এই হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। দলীয় ১৭৬ রানে ফেরেন সৌম্য। ব্যক্তিগত ৮০ রান।

 তবে তামিম রয়ে যান তার নিজ ধারায়। ৮১ রান করে অপরাজিত থেকে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন। সৌম্য ফিরে যাওয়ার পর মুশফিকুর রহিম উইকেটে আসলেও রানের গতি মন্থর হয়নি। তামিমের পাশাপাশি ব্যাট চালিয়ে তিনি করেন ১৪ বলে ১৬।

এর আগে, মিরাজ, মাশরাফি ও সাকিবদের বোলিং দাপটে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রানের সংগ্রহ পেয়েছে। যদিও টানা দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে ক্যারিবীয়দের দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নেন শাই হোপ।

 সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয় দুপুর ১২টায়।

বাংলাদেশ একাদশে দুটি পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েসের জায়গা এসেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। আর পেসার রুবেল হোসেনের পরিবর্তে নেওয়া হয়েছে অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে। ক্যারিবীয় দলে ফাস্ট বোলার ওশানে থমাসের জায়গায় নেওয়া হয়েছে ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন মেহেদি হাসান মিরাজ। দলীয় চতুর্থ ওভারে তার ঘূর্ণিতে মিঠুনকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৯ রানে মাঠ ছাড়া হন চন্দরপল হেমরাজ।

উইন্ডিজ শিরিরে দ্বিতীয় আঘাতটিও করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ব্যক্তিগত ৬.৪ বলে বোল্ড করে ফেরান ড্যারেন ব্রাভোকে। ২৬ বলে ১০ রান করে ফেরেন এই উইন্ডিজ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।

দলীয় ২৩ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে মারলন স্যামুয়েলসকে সরাসরি বোল্ড করেন রুবেল হোসেনের বদলে এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।শিমরন হেটমায়ারকে শূন্য রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বাংলাদেশ সফরে সাতবারের দেখায় এ নিয়ে ছয়বারই হেটমায়ারকে আউট করলেন মিরাজ।

পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে এক রানে মুশফিকের ক্যাচে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট দখল করেন মিরাজ।

রোস্টন চেজকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান। তুলে মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ৮ রানে বাউন্ডারি লাইনে থাকা সৌম্য সরকারের ক্যাচে মাঠ ছাড়েন চেজ। পরে নতুন ব্যাটসম্যান ফ্যাবিয়েন অ্যালেনও সাকিবের শিকার হন। মোহাম্মদ মিঠুন দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান তাকে।

কেমো পলকে সরাসরি বোল্ড করে নিজের প্রথম উইকেট উদযাপন করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। নিজের অষ্টম ওভারে ১২ রানে থাকা পলকে সাঝঘরে ফেরান টাইগার অধিনায়ক। পরে ব্যক্তিগত ৩ রানে কেমার রোচেকে এলবির ফাঁদে ফেলেন তিনি।

মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ ও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি উদযাপন করে অপরাজিত থাকেন শাই হোপ। ১৩১ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ১০৮ করেন এই ডানহাতি।

বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে দুর্দান্ত বল করা মিরাজ ১০ ওভারে মাত্র ২৯ রানের বিনিময়ে ৪টি উইকেট তুলে নেন। এছাড়া দুটি করে উইকেট পান মাশরাফি ও সাকিব। একটি উইকেট পান সাইফ।

এ ম্যাচে টসের মধ্যদিয়ে দারুণ একটি রেকর্ড স্পর্শ করলেন মাশরাফি। সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে টপকে দলনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৭০টি ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এছাড়া দেশের জার্সিতে ২০০তম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। ক্যারিয়ারে ২০২টি ম্যাচে দুটি তিনি এশিয়া একাদশের হয়ে খেলেছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটিই হতে পারে নড়াইল এক্সপ্রেসের শেষ ম্যাচ।

এদিকে এই সিরিজ জিতলে এক বছরে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজও জেতা হবে বাংলাদেশের। এর আগে গত ক্যারিবীয় সফরে ও ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিল লাল-সবুজের দল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com