বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ইলিয়াস আলীর গুমের পেছনে বিএনপির লোক!

এম ইলিয়াস আলী ও মির্জা আব্বাস (ফাইল ছবি)

তরফ নিউজ ডেস্ক: আলোচিত বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের নয় বছরে এসে দলের শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাস দাবি করেছেন, বাংলাদেশ সরকার বা আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াসকে গুম করেনি। তার গুমের সঙ্গে খোদ বিএনপির লোক জড়িত।

শনিবার বিকালে একটি ভার্চুয়াল সভায় মির্জা আব্বাস এই দাবি করেন। ঢাকাস্থ সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মেলনীর উদ্যোগে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে এই ভার্চুয়াল সভা হয়।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। তার নিখোঁজের পর থেকে সরকারকে দায়ী করে আসছে বিএনপি। তার সন্ধান দাবিতে অনেকবার রাজপথে কর্মসূচিও দিয়েছে দলটি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আব্বাস বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা, দেশপ্রেমিক সাহসী নেতা। এখানে আমাদের দলের মহাসচিব আছেন, তাকে বলতে চাই, ইলিয়াস গুমের পেছনে আমাদের দলের যে বদমাইশগুলো রয়েছে তাদেরকেও চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেন প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাকবাতিণ্ডা হয়, ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিল তাকে। সেই বিষধর সাপগুলো এখনো আমাদের দলে রয়ে গেছে। যদি এদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করতে না পারি সামনে এগোতে পারবেন না কোনো অবস্থাতেই।’

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘ছাত্র নেতাদের সাথে ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে আমার সঙ্গে সম্পর্ক, যেটা আজ বিদ্যমান। ভালোবাসার ছাত্র নেতাদের মধ্যে ইলিয়াস আলী ছিল অন্যতম। ইলিয়াস যে রাতে গুম হয় ওই রাত দেড়টা পৌনে ২টার দিকে খবর পাই। তাৎক্ষণিকভাবে আমার পরিচিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগযোগ করি। তারা আমাকে জানায়, তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যেই পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে থেকে নেয়া হলো, সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই খবরটা আপনারা (উপস্থিত নেতৃবৃন্দ) জানেন না। সেই গাড়িতে যে কয়জন পুলিশ কর্মকর্তা ছিল তাদের আজও পাওয়া যায়নি। যেহেতু ইলিয়াস আলীর গাড়িচালককেও পাওয়া যায়নি। তাহলে এই কাজটি করল কে?’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা কিন্তু সামনের লক্ষণ ভালো দেখছি না। ইলিয়াসকে গুমের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হতে যাচ্ছে। আমি বারবার বলি নেতৃত্ব শূন্যতা। হিসাব করে দেখেন একটা একটা করে রাজনৈতিক দল শেষ করে দেয়া হচ্ছে। এখন চলছে হেফাজত। বিএনপির ওপর নির্যাতন তো চলছেই। একটা সময় আওয়ামী লীগকেও শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। আমি ধরে নিলাম আওয়ামী লীগ সরকার ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি; তাহলে গুম করল কে? আমাদের একজন নেতা সালাহউদ্দিনকে পাচার করে নিয়ে গেল, চৌধুরী আলমকে গুম করা হল, আমাদের দলের বহু নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এটা কিন্তু বাংলাদেশকে ধ্বংস করার পূর্ব আলামত।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বেঁচে থাকি কি না জানি না, দেখবেন সামনে আরও ঘটনা ঘটবে। গণমাধ্যমে খবরে দেখলাম প্রত্যেক থানা সামনে মেশিনগান ফিট করেছে, বালু বস্তা দিয়ে বাংকার করা-এসব কিসের আলামত? কাকে মারার জন্য এসব লাগবে? ব্রিটিশ সরকার একটি লাঠি দেয়ার আগে চিন্তা করে সেখানে বাংলাদেশে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর আদলে পুলিশ বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে। একটু হিসাব করার ব্যাপার বুঝি চলে এসেছে।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের একটি প্লাটুনে মাত্র একটি এলএমজি ছিল। আজকে প্রত্যেক থানার সামনে এসব মেশিনগান। এটা নাকি পুলিশকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য। যেখানে পুলিশ জনগণকে সুরক্ষা দেবে, সেখানে পুলিশের সুরক্ষা এটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগে। পুলিশকে আক্রমণ করতে যাবে। যেখানে পুলিশের অত্যাচারে আমরা পাগল হয়ে গেলাম। এটা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এখন যে অত্যাচার হচ্ছে সেটা ইলিয়াস আলী গুমের সূত্র ধরে।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, জহিরউদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল এবং নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com